‘জিয়াউর রহমানের হত্যার রাজনীতি দেশের ইতিহাসে এটি কালো অধ্যায়’ উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে যুক্ত জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করতে সশস্ত্রবাহিনীর হাজার হাজার জওয়ান এবং অফিসারকে হত্যা করে খুনতন্ত্র কায়েম করেছিলেন, দিনের পর দিন কারফিউ দিয়ে দেশে কারফিউতন্ত্র কায়েম করেছিলেন তবুও নিজে রক্ষা পাননি।’
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসকল কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘সকালে জিয়াউর রহমানের চল্লিশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে ফুল দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে ভাষায় বিষোদগার করেছেন সেজন্য আমাকে বলতে হচ্ছে, জিয়াউর রহমান শুধু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন তা নয়, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের তিনি দেশে-বিদেশে পুণর্বাসিত করেছিলেন, দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুহত্যার বিচার না হওয়ার জন্য ইনডেমনিটি বিল সংসদে পাস করেছিলেন। অর্থাৎ স্বাধীনতার মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শুধু হত্যা করা নয়, সে হত্যাকান্ডের খুনীদের পুণর্বাসিত করা এবং হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ার জন্য সবকিছুই করেছিলেন জিয়াউর রহমান।’
‘জিয়াউর রহমান এবং তার পরিবার বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী’ বর্ণনা করে ড. হাছান বলেন, ‘যে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে তিনি ক্ষমতা দখল করেছিলেন তাদের হাতেই জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন। আমরা কোনো হত্যাকান্ডই সমর্থন করি না এবং এভাবে যিনি মানুষ হত্যা করেন তিনি যে রক্ষা পান না, সেটির প্রমাণ হচ্ছে জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ড।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, তিনি যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়ার জ্ঞাতসারে এবং তার পুত্র তারেক রহমানের পরিচালনায় যেভাবে ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাসে এ ধরণের হামলা খুবই বিরল।’
‘এছাড়া বেগম জিয়ার আমলে আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এএমএস কিবরিয়া, খুলনার মঞ্জুরুল, হুমায়ুন কবীর বালি, গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী, নামাজরত মসজিদের ইমাম, বৌদ্ধ ভিক্ষু, বহু সাংবাদিকসহ হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে’, বলেন হাছান মাহমুদ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য ‘আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনের চেষ্টা করছে’ এর জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে নিবন্ধিত দল এবং গত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায় দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিরাজমান। মির্জা ফখরুল সাহেবরা এসমস্ত কথা বলে আসলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেন। আর তারা মাঝেমধ্যে নির্বাচন-উপনির্বাচন বর্জন করেন, করবেন বলে ঘোষণা দেন। এটির কারণ, নির্বাচনে তারা ক্রমাগতভাবে হেরে যাচ্ছে। যারা নির্বাচনে যেতে ভয় পায়, তারা এ ধরণের বক্তব্য দিয়ে আত্মতুষ্টি পাওয়ার চেষ্টা করেন। মির্জা ফখরুল সাহেবের বক্তব্যটাও ঠিক সেরকম।’
বিএনপি মহাসচিবের অপর এক মন্তব্যের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে দেশের সমস্ত শুভ কাজের সাথে আওয়ামী লীগ যুক্ত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬শত ডলার থেকে ২২ শ’ ২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে বহু আগে পেছনে ফেলেছি। সামাজিক ও মানবিক সূচকে আমরা ভারতকেও পেছনে ফেলেছি। অতি সম্প্রতি মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রেও আমরা ভারতকে ছাড়িয়ে গেছি। দেশ গত বারো বছরে বদলে গেছে। মির্জা ফখরুল সাহেব যদি এগুলো দেখতে না পান, তাহলে তিনি চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধিরের মতো আচরণ করছেন।’