করোনা সংক্রমণে ঝরঝরিত সীমান্তের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। রাজশাহী বিভাগজুড়ে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছড়িয়েছে পড়েছে। দিনকে দিন মৃতের সংখ্যার বাড়ছে।
গত দুদিন ধরে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যায় ঢাকাকেও ছাড়িয়েছে রাজশাহী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে নতুন করে ৬৭৩ জনের শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা মঙ্গলবার প্রাপ্ত দেশের আট বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এদিন ঢাকা ও খুলনায় নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৫৪৪ জন। চট্টগ্রামে ২৯১ জন, রংপুরে ১১৪ জন, বরিশালে ৩৯ জন, সিলেটে ৬৯ জন এবং ময়মনসিংহে ৪৮ জন।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সবমিলিয়ে সারা দেশে মোট ২ হাজার ৩২২ জনের করোনা আক্রান্তের তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার ৯৮ জন আক্রান্তের তথ্য মিলেছে কেবল রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকেই। এদিন রাসিকের উদ্যোগে ১৩টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে ৯৫৮ জনকে পরীক্ষা করলে ৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২২ শতাংশ।
চারটি প্রাথমিক আরবান হেলথ কেয়ার সেন্টার ছাড়া বাকি আট কেন্দ্র হলো- আমচত্বর মোড়, কাশিয়াডাঙ্গা মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সিঅ্যান্ডবি মোড়, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, ভদ্রা মোড়, তালাইমারি মোড়, শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর (রেলগেট)। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও বাসভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়।
রাজশাহী বিভাগে সংক্রমণের হার বাড়ার প্রবণতা স্পষ্ট হয় গত সোমবার। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে ৬০৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। একই দিনে ঢাকায় সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৫৪৫ জন এবং খুলনায় ৪২৭ জন।
শুধু শনাক্তের দিক দিয়েই নয়, গত এক দিনে রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে। ঢাকার মতই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ মতে, সারা দেশে মারা যাওয়া ৪৪ জনের অর্ধেকই এই দুই বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত এক সপ্তাহে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে ৬০ জনই করোনার হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর বাসিন্দা। এর মধ্যে ৩৭ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ও রাজশাহীর ২৩ জন।
মৃত ৭২ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা যান ৪৫ জন। বাকিরা মারা যান নমুনা পরীক্ষার আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
এর মধ্যে ১ জুন সাতজন, ২ জুন সাতজন, ৩ জুন নয়জন, ৪ জুন ১৬ জন, ৫ জুন আটজন, ৬ জুন ছয়জন, ৭ জুন ১১ জন ও সর্বশেষ আটজন আটজন মারা যান।
রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস গণমাধ্যমকে এসব তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এক সপ্তাহে মারা যাওয়া ৭২ জনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৭ জন এবং রাজশাহীর ২৩ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীদের অধিকাংশই ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত। এজন্য সেখানকার রোগীর মৃত্যু হার বেশি ।
অবশ্য রাজশাহী বিভাগে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা বেশি হলেও শনাক্তের হারে সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগে।
মঙ্গলবার খুলনায় শনাক্তের হার ছিল ৩৭ শতাংশ, যেখানে ঢাকায় ৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে তা ১১ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ শতাংশ, রংপুরে ২৬ শতাংশ।
গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর সংক্রমণের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকার পরিস্থিতিই সবচেয়ে খারাপ ছিল।
এখনও মোট শনাক্ত রোগীর দিক দিয়ে ঢাকা দেশের আট বিভাগের মধ্যে সবেচেয়ে এগিয়ে আছে। ঢাকায় এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৪ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এসেছে সরকারের খাতায়, এর পরেই রাজশাহীতে শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ১৩৭ জন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছিল মার্চের শেষে। এরপর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে মৃত্যু।
গত ৭ এপ্রিল দেশে রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এর ১৯ এপ্রিল এক দিনেই রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর আসে।