যুক্তরাষ্ট্রের মিনেয়াপলিসে আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার দায়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনকে ২২ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
গত শুক্রবার এই দণ্ড ঘোষণার সময় আদালত বলেছেন, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অপব্যবহার করে ডেরেক শভিন যে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন, সে কারণে তাকে এই সাজা ভোগ করতে হবে।
২০২০ সালের মে মাসে জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন পর ফ্লয়েড (৪৮)। সেসময় তার ঘাড়ে শভিনের (৪৫) হাঁটু গেড়ে বসে থাকার ৯ মিনিটের ভিডিও সাড়া বিশ্বে সমালোচনার ঝড় তোলে।
সেসময় ফ্লয়েড বারবার আকুতি জানিয়ে বলছিলেন, তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। কিন্তু তাতে মন গলেনি ঘাড়ে চেপে বসা পুলিশ কর্মকর্তার।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বর্ণবাদ ও পুলিশি বল প্রয়োগের বিরুদ্ধে শুরু হয় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
এ কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর মাসখানেক পর তার পরিবার শহর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে।
শুনানির পর গত ২১ এপ্রিল ১২ সদস্যের জুরি বোর্ড ডেরেক শভিনকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার তার সাজা ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেরেক শভিন কখনও অস্ত্র বহন করার অনুমতি পাবেন না।
ফ্লয়েডের পরিবার এবং তার সমর্থকরা আদালতের এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মামলার শুনানিতে ফ্লয়েডের ভাই টেরেন্স ফ্লয়েড আসামির সর্বোচ্চ ৪০ বছরের কারাদণ্ড চেয়েছিলেন।হত্যার আসামি শভিন শুনানিতে বলেন, তিনি ফ্লয়েডের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন। কিন্তু যা ঘটেছে, সেজন্য একবারও ক্ষমা চাননি সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।
২০২০ সালের মে মাসে এক দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কেনেন জর্জ ফ্লয়েড। কিন্তু দাম দিতে গিয়ে তিনি জাল নোট দিয়েছেন বলে সন্দেহ হয় দোকানির। ফ্লয়েড সিগারেটের প্যাকেট ফেরত দিতে রাজি না হওয়া ওই দোকানি পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এসে ফ্লয়েডকে তার গাড়ি থেকে বের করে এবং হাতকড়া পরায়।
এরপর পুলিশ ফ্লয়েডকে তাদের গাড়িতে তুলতে চাইলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে মাটিতে পেড়ে ফেলে তার ওপর চেপে বসে।
শভিন তার হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেন ফ্লয়েডের ঘাড়। টানা নয় মিনিট ধরে তিনি ঘাড়ের ওপর চাপ দিয়ে চলেন।
ফ্লয়েড বারবার বলছিলেন তিনি নিশ্বাস নিতে পারছেন না। ওই ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পুলিশি নিষ্ঠুরতা আর ফ্লয়েডের মৃত্যুর ওই ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করেন কিশোরী ডার্নেলা ফ্রেজিয়ার। কয়েকদিন আগে ডার্নেলা ফ্রেজিয়ারকে যুক্তরাষ্ট্র সাংবাদিকতার বিশেষ পুরস্কার পুলিৎসার দিয়েছে।