জনগণের কাছে তামাশার আরেক নাম সরকারের লকডাউন: ফখরুল

করোনা মোকাবেলায় সু-পরিকল্পনা ভিত্তি না গড়ে দপায় দপায় সরকারের লকডাউন দেশের মানুষের কাছে এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খেটে খাওয়া দিন মজুর, শ্রমিকদের দরে জন্য খাওয়ার এবং নগদ অর্থের ব্যবস্থা না হরে তামাশার লকডাউন কখনোই কার্যকর হবে না।

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে শনিবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কয়েকদিন পর পর সরকারের ঘোষিত লকডাউন দেশের মানুষ মানে না। সরকারের অযোগ্যতা ও
জবাবদিহিহীনতার কারণে বারংবার তামাশার লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে। আসলে করোনা মোকাবিলায় সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে ভালো আছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিদিন ওনার (খালেদা জিয়া) চেকআপ হয়। রাতে ওনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা চেকআপ করেন। সপ্তাহে একদিন গোটা টিম তাকে দেখবে। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে দলীয় উদ্যোগ ‘সচল’ আছে। এই বিষয়ে অগ্রগতি হলে আমরা অবশ্যই আপনাদের জানাব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে লকডাউনের নামে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো। সেই ছুটিতে দেখা গেল শ্রমিকরা একবার বাড়ি গেল, আবার তারা ফিরে এলো। শনিবার আবার লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হলো। একটা লকডাউন তো এখন চলছে। বাইরের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বন্ধ। ফলে কী হচ্ছে? একদল লোক যাচ্ছে ছুটি সাতদিন মনে করে। আবার আরেক দল ঢাকায় ফিরছে। এই যে অবস্থাগুলো আপনি আগে চিন্তা করবেন না কী হতে পারে। আসলে সরকার নানা নামে লকডাউন ব্যবহার করে তামাশা করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাজধানী ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় কোভিড-১৯ ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রোগীর চাপে সরকারি ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় জরুরি চিকিৎসা উপকরণ ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কা বিষয় যে, রাজধানীর কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে অধিকাংশ জরুরি চিকিৎসার উপকরণ মজুত প্রায় শেষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সব ব্যবস্থা আছে বলে যে মিথ্যাচার করছে তাতে স্থায়ী কমিটির সভায় ক্ষোভ ও ধিক্কার জানানো হয়। করোনা সংকট মোকাবিলায় অবিলম্বে করোনা বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট জাতীয় কমিটি, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, এনজিও এবং রাজনৈতিক নেতাদের মতের মাধ্যমে যৌথ প্রচেষ্টার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপিতে নেতৃত্বের কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি একটা উদার রাজনৈতিক দল। যেহেতু গণতান্ত্রিক দল, সেখানে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা থাকবে। কিন্তু আন্ডার দ্য লিডারশিপ অব তারেক রহমান বিএনপি ইজ ইউনাইটেড দেন দ্য পাস্ট। বিএনপিকে নিয়ে কিছু গণমাধ্যমের নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনার প্রসঙ্গে টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার জনগণের সব অধিকারকে কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রকে যেভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় কিন্তু সে রকম কোনো লেখা দেখি না। অথচ সারাক্ষণ বিএনপির সমালোচনা। তারপরও বিএনপি ইজ এ ফ্যাক্টর, তারেক রহমান আরেকটা বড় ফ্যাক্টর। তিনি বলেন, বিএনপির মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। যারা বিএনপির বিরুদ্ধে লেখছেন তারা নিঃসন্দেহে ভুল তথ্য থেকে লেখেন, বিভ্রান্ত হয়ে লেখেন এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করেন।

বিএনপির ভবিষ্যৎ কুয়াচ্ছন্ন-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎই ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত। গোটা জাতিকে তারা আজ একটা অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। জনগণ জেগে উঠলে ক্ষমতাসীনরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।

এ সময় দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু উপস্থিত ছিলেন।