বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন হিসেবে পরিচিত। তবে নানা কর্মকাণ্ডে যখন যুবলীগের ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে যায়,ঠিক তখনি বাবা শেখ ফজলুল হক মনির হাতে গড়া সংগঠনের প্রতি বিশেষ মায়া এবং দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আওয়ামী যুবলীগের হারানো গৌরব, ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তারই সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশকে দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর যুবলীগের চেয়ারম্যনের দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের যুব সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে ইতিবাচক কাজ শুরু করেন তিনি। একইসঙ্গে যুব সংগঠনের মাথার উপর একটি মহিরুহ বটবৃক্ষ হিসেবে ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন শেখ ফজলে শামস পরশ।
২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনসটিটিউটে যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় সভায় চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ ফজলে শামস পরশের নাম ঘোষণা করা হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েই প্রথম প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যুবলীগের একজন চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থেকে কাজ করব। আপনারা আমার শক্তি হবেন। আমার বাবা শেখ মণি, বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এই সংগঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তার কন্যার দেশের প্রতি হৃদয়ের ভালোবাসা থেকে আমি সাহস পাই। তাই আজ আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছে আমি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে দায়িত্বগুলো পালন করবো।’
তারপর থেকে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে এসে ইতোমধ্যেই সফল হয়েছেন। পরশের নেতৃত্বে আরও বেশি সুসংগঠিত হয়েছে যুবলীগ। বিশেষ করে বৈশ্বিক এই করোনা মহামারির সময়ে মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে যুবলীগ। তার ধারাবাহিকতায় প্রায় এক বছর পর ঘোষিত যুবলীগের নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যোগ্য, দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে পরশের অন্যতম সাফল্য হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে।
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের জন্মদিন আগামীকাল শুক্রবার। তিনি ১৯৬৯ সালের ২ জুলাই পিতা শেখ ফজলুল হক মনি ও মাতা শেখ আরজু মনির ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহন করেন। জন্মের শুভক্ষণ সমুজ্জ্বল প্রীতময় হোক। শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় অভিনন্দন বার্তা। জীবনের প্রতি পরতে আনন্দক্ষণগুলো আপনাকে ছুঁয়ে থাকুক। বিপদমুক্ত হোক চলার পথ। আপনার স্নেহছায়ায় যেন অনেক বছর পথ চলা হয় আমাদের। আমরা আপনাকে রাজনৈতিক মঞ্চে একজন আদর্শিক নেতা হিসেবে পেয়েছি। আপনার বিনয়ী উদারতার স্পর্শে আমাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করবে। আপনি রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যুবলীগকে রাজনৈতিক মাঠে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সফল রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুখী ও সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
শেখ পরশ বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় সন্তান। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে উঠা পরশ খুব কাছ থেকেই দেখেছেন ১৯৭৫ সালের ট্র্যাজেডি। সেই ট্র্যাজেডিতে বাবা-মাকে হারানো শেখ ফজলে শামস পরশ ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলারাডো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার পর দেশে ফেরেন। তারপর গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এবং বর্তমানে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় রয়েছেন। সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে রাজনীতির দীক্ষা নিয়েছেন খুব কাছ থেকে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু তাকে স্বপরিবারে হত্যার ঘটনায় শেখ পরশের মনে বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল। পরশের বাবা এদেশের তরুণ-যুব সমাজের আলোকবর্তিকা শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা তথা জাতীয় চার মূলনীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমুহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্য থেকে স্বাধীনতা ও প্রগতিকামী যুবক ও যুব মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন গড়ে তোলাই ছিল যুবলীগের উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগের নেতাকর্মীরা দেশ গঠনে নিজেদের আত্মনিয়োগ করে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নির্দেশে যুবলীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল নেতাকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাগরিক সচেতনতায় মাঠে নেমেছিলেন। প্রথমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক বিতরণ করে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ায় পথচারী, ভাসমান মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা প্রদান করেছে। যুবলীগের কর্মী থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যার যার সাধ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
মুজিববর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘গাছ লাগাই, জীবন বাঁচাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে যুবলীগ। ফলজ, বনজ এবং ওষধি-এই তিন রকম বৃক্ষরোপণে অংশ নিচ্ছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এই নির্দেশনার পর মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
করোনার সময় যখন ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না। ঠিক তখনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে যুবলীগের নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। কৃষকের পাকা ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এমনকি ধান মাড়াই করে গোলায় ভরে দিয়েছে। শুধু তাই নয় আক্রান্তের ভয়ে যখন পরিবারের আত্মীয়-স্বজন করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন কাজে এগিয়ে আসেনি ঠিক তখনি যুবলীগ তাদের জানাজা থেকে শুরু করে দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে। ফলে করোনা সংকটকালীন অবস্থায় সাধারণ মানুষের কাছে যুবলীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিদিন মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া যুবলীগ সারাদেশে অসহায়, হত দরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। আগস্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দোয়া মাহফিল, তবারক বিতরণ, কোরআন খতমসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে যুবলীগ।
জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যুবলীগের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, ‘যুবলীগ এই সংকটে দেশের বিভিন্ন জায়গায় লাশ দাফনে কাজ করেছে। যুবলীগের পক্ষ থেকে ৪২ লাখ পরিবারে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের দুই হাজার পাঁচশত হেক্টর জমির ধান কেটে দিয়েছে। মুজিববর্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। করোনায় সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেই উদ্দেশ্য নিয়ে শেখ ফজলে শামস্ পরশকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, এরইমধ্যে তিনি সেই সফলতা অর্জন করেছেন। যার ফলে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে যুবলীগ। ফিরে পেয়েছে তার হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব। মানবতার যুবলীগে পরিনত হওয়া সংগঠনটি আর্তমানবতায় মানুষের কল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত থাকবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার থাকবে ও জাতির যেকোন সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সর্বোপরি এদেশের যেকোন স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি প্রতিহত করার মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ থাকবে আন্দোলন-সংগ্রামের অপ্রতিরোধ্য সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
মানবতার যুবলীগের প্রবর্তক, সংগঠনের গৌরব ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারকারী হে মহান নেতা শেখ ফজলে শামস পরশ। আপনার জন্মদিনে রইল শ্রদ্ধা, সম্মান ও দোয়া। আপনি বেঁচে থাকুন কোটি যুবকের হৃদয়ের গহীনে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ।