ডিসেম্বরের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে : হানিফ

টিকা কার্যক্রম নিয়ে বিএনপির সমালোচনার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, করোনা দুর্যোগকালে আওয়ামী লীগই জনগণের সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছে। আর বিএনপি টেলিভিশনের সামনে বসে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে।

গতকাল বিএনপি নেতারা বলেছে, টিকা নিয়ে নাকি সরকার ধোয়াসা সৃষ্টি করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে টিকা নিয়ে কোন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয় নাই। আমাদের সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকা আবিষ্কারের পর থেকে মানুষকে টিকার আওতায় আনতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহে আরও এক কোটি টিকা দেয়া হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকা দেয়া হবে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।

শনিবার (৭ আগস্ট) সকালে রাজধানীর উত্তরখানের কাচকুড়া শিক্ষা কমপ্লেক্সে অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উওর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা ও ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় -দরিদ্রের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

করোনা মহামারীতে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে হানিফ বলেন, করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার করা। আমরা যখনই কথা বলি তখন আমাদের থুতু লালাসহ বিভিন্নভাবে আশেপাশের লোকজনকে গ্রাস করে। এক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীর লালা -থুতু আশেপাশে সুস্থ মানুষের সাথে মিশলে সুস্থ মানুষও এ ভাইরাসে সংক্রামিত হচ্ছেন। কাজেই মাস্ক পরা থাকলে আমাদের লালা -থুতু মাস্ক এর ভিতরে আটকে যাচ্ছে। ফলে আশেপাশের লোকজন সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ঘরের বাইরে যেখানে যাওয়া হোক না কেন মাস্ক পরা অবশ্যই বাধ্যতামূলক করতে হবে। এছাড়া বাড়ির নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে টিকা নিতে হবে। টিকা দেয়া হলেও আমাদের মাস্ক পরিধান করতে হবে। টিকা দেয়ার পরে মাস্ক পরিধান করলে সংক্রমিত হবে না জনগণ।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, মির্জা ফখরুল বলেছেন বিএনপি কোটি কোটি মানুষকে করোনা মহামারীতে সহায়তা করেছে। তার এ বক্তব্য শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আপনাদের কোন নেতাকর্মী কোন এলাকায় গিয়ে জনগণকে সহায়তা করেছে বলেন তো? স্বপ্নের মাধ্যমে জনগণকে সহায়তা করছেন, সেটা আবার বলে বেড়াচ্ছেন।

‘বিএনপি’ নিয়ে তিনি বলেন, এ দলটি নিয়ে কথা বলার কোন রুচি আমার ছিল না। তারপরেও এই দলের একজন নেতা টিকা নিয়ে গতকাল বিভ্রান্তিকর একটি তথ্য দিয়েছেন। এরা ক্ষমতায় থাকাকালে জনগণের সম্পদ লুট করেছে, সন্ত্রাস-নাশকতা করেছে। হাওয়া ভবনে থেকে তারেক রহমানসহ বিএনপি যে দুর্নীতি করেছে সেই জন্য জনগণ তাদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন কোন সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই। এরা এখন মিডিয়ার সামনে বসে মিথ্যাচার করে। এই যে করোনা দুর্যোগ দুই বছর চলছে, তারা কি বলতে পারবে কোন একটি এলাকায় গিয়ে মানুষকে সহায়তা করেছে, জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে? অথচ টেলিভিশনের সামনে বলে যাচ্ছেন, কোটি কোটি মানুষকে তারা সহায়তা করেছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি বিএনপি নেতাদের বলবো, আপনারা কি টিকা নেন নাই? তারাও টিকা নিয়েছে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া টিকা নিয়েছে, মির্জা ফখরুলসহ তাদের সব নেতাই টিকা নিয়েছে। এরপরও তারা বলে টিকা পাচ্ছিনা। বিএনপি’র অভ্যাসই হচ্ছে মিথ্যাচার করা। মিথ্যাচার ছাড়া তাদের তো আর কিছুই নেই। জনগণের কাছে তাদের তো কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই তারা টেলিভিশনের সামনে বসে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো সক্ষমতা আপনাদের নেই। কাজেই দয়া করে মিথ্যাচার করবেন না। এই মিথ্যাচারের জবাব অতীতে জনগণ আপনাদের দিয়েছে, ভবিষ্যতেও এর জবাব জনগণ আপনাদের দিবে।

বক্তব্যের শুরুতে হানিফ শোকের মাস আগস্টকে স্মরণ করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। এরপর চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস নিয়ে তিনি বলেন, আজকে এমন একটা সময়ে আপনাদের সামনে এসে হাজির হয়েছি যখন সারা পৃথিবী করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত। মানুষের জীবন বিপন্ন। ২০২০ সাল থেকে ২১ সালের চলতি আগস্ট মাস পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। এই পর্যন্ত প্রায় ৫০ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছে। এখনো পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই করোনা গরিব-ধনী, হিন্দু মুসলমান জাত পাত কিছুই দেখে না। বিশ্বের ধনী রাষ্ট্র আমেরিকা। সেখানেও এখন পর্যন্ত সাত লক্ষের উপরে মানুষ মারা গেছে। ইংল্যান্ড, কানাডা, জার্মানি থেকে শুরু করে সকল দেশে মানুষ মারা যাচ্ছে। আমরা তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের দেশেও করোনা আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে অনেকে মারা গেছেন। এখনো অনেকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন এই ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট চলতেছে। এতে আক্রান্ত হলে ঝুঁকির সম্ভাবনা বেশি থাকছে। করোনা ভয়ঙ্কর, এটা মরণব্যাধি। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে। শুধু সরকার, চিকিৎসকরা আমাদের করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারবে এটা ভেবে উদাসীনভাবে চললে আমাদের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

করোনাকালীন সরকার ও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে এ সংসদ সদস্য বলেন, করোনা শুরুর পর থেকে যখন মিল কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেল, পরিবহন বন্ধ হয়ে গেল, সাধারণ অনেক মানুষের চাকরি চলে গেল, দিনমজুররা অসহায় হয়ে পড়লেন এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে অসহায় জনগণের জন্য ত্রাণ বিতরণ করেছেন। গত বছর দুই কোটি মানুষকে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। আড়াই হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে ৫০ লক্ষ পরিবারকে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১ কোটি ৯০ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। করোনা শুরুর পর থেকে আমরা মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দেয়া, সচেতন করার পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। যার যেটা সামর্থ্য আছে আমরা সেটা নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। এই বছরও সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জনগণকে ত্রান দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। আজকেও এখানে ১২০০ মানুষকে ত্রান দেয়া হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার এ সাংসদ বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যে দল বিপদে-আপদে, সংকটে সব সময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ যেভাবে জনগণকে সহায়তা করে সেরকম একটি দল এদেশে নয়, বিশ্বেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল।

সমাজের বিত্তশালীদের উদ্দেশ্যে হানিফ বলেন, আপনারা যার যার অবস্থান থেকে এসে অসহায় জনগণের পাশে এই কঠিন সময়ে দাঁড়ান। আমাদেরকে অসহায় মানুষকে খুঁজে বের করে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই সংকট কাটিয়ে উঠবো ইনশাল্লাহ।

উত্তরখান ইউনিয়ন পরিষদ আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন এবং উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিউর রহমান মিলনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব হাবিব হাসান এমপি, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এসএম তোফাজ্জল হোসেন, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খসরু চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এডভোকেট রোকেয়া সুলতানা পলি ,বদপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম মিজু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল আলম ভূঁইয়া জুয়েল, শ্রম সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম মজনু, সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শেখ, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. মিজানুর রহমান চাঁন, আতাউর রহমান খান বোরহান, হিমাংশু কিশোর দত্ত ও আফরোজা খন্দকারসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।