বিএনপির কার্যক্রমে আমরা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই: আব্দুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগস্ট আওয়ামী লীগের সব হারানোর মাস উল্লেখ্য করে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন- জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল এর প্রমাণ কি? এর এর প্রমাণ দেন? আমি বলতে চাই- মির্জা সাহেব, আগস্ট মাসে আপনারা কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন, জিয়ার মাজারে ফুল দেয়ার নামে বাস ভাঙচুর, যানবাহন ভাঙচুর করে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবার পায়তারা করেছেন, এখনও করছেন। আমরা দেখেছি আগস্ট মাস আসলেই ওরা (বিএনপি) ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তাদের কার্যক্রমে আমরা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। আজ মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয় নাই- এই কথার সঙ্গে আমি একমত নই জানিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বলেন- আগস্ট বেদনা-বিধুর রক্তাক্ত বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের এই ১৫ আগস্টে ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়িতে আমাদের পিতার লাশ পড়ে ছিল। এই খবর শুনবার পরে কত ব্যাকুলতা, চোখে-মুখে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, কত না স্বপ্ন দেখা এই বুঝি কোথাও থেকে কোন ডাক আসবে। এই বুঝি পিতা হত্যার বদলা নেবার প্রতিরোধ মিছিলে হাজির হব। কিন্তু সেদিন দুঃখজনক হলেও সত্য- কোন ডাক সেদিন আমরা পাইনি। সেদিন আমাদের অনেক দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ছিল, কিন্তু সেই নেতৃত্ব তাদের সেই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে । কিন্তু তারপরও বলব, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধের জন্য সেদিন প্রতিরোধ হয়েছিল, সেদিন বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে যে যেমন পারে তেমন ছুটে, সেদিন পিতা হত্যার বদলা নেবার জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন- আমি নিরেট একটা কথা বলতে চাই, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল, সেই সেই ফাঁসি কার্যকর হয় নাই। আমি বলব ৭৫ সালের ১৫ ই আগস্টে সেই পাকিস্তানি শক্তি তাদের দোসর এবং এই দেশীয় চরেরা সেদিন সংঘবদ্ধ হয়েই বঙ্গবন্ধুর বুক বুলেট দিয়ে ঝাঁঝরা করে সেই ফাঁসি কার্যকর করেছিল। অথচ বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়বার অবিরাম সংগ্রাম চালিয়েছিলেন। তিনি প্রথম ৯.০৪ শতাংশ জিলিপি নিয়ে এই দেশ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য-গুদাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, ঈদের মাঠে সেদিন আওয়ামী লীগের এমপিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, বিদেশ থেকে জাহাজে আমাদের খাদ্যসামগ্রী গভীর সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং কবির উদ্দিন প্রধান তার সন্তান শফিউল আলম প্রধান এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল। সেই সাত খুনের আসামী শফিউল আলম প্রধান সেদি প্রকাশ্যে সূর্যসেন মহসীন হলে হত্যাকাণ্ডের এক তান্ডব চালিয়েছিল। এই সবই ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবার ক্ষেত্র প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন- এই আগস্ট মাস যখনই আসে তার (প্রধানমন্ত্রী) জীবনে নেমে আসে এক অসহ্য যন্ত্রণা ও এক দুঃসহ অন্ধকার। মনে হয় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জীবনের শেষ আকুতি দিয়ে বলতে চান- হে আগস্ট তুমি আর আমার জীবনে এসো না। তারপরেও আসে, তারপরেও এই আগস্ট মাসে দাঁড়িয়েই সামনের পথ আমাদের চলতে হয়, আমাদের নেত্রী সেই পথ চলেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন- প্রিয় নেত্রী, প্রিয় আপা আপনাকে বলতে চাই এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কে বড় ভালবাসেন, আপনার নিজের সন্তান তুল্য করে জানেন, আপনার ছোট ভাইয়ের মত করে আদর করেন। এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে, কিন্তু আপনার স্বস্তির জায়গা সেখানে, এই করোনাকালীন সময়ে ছেলে বাবার লাশ দেখে নাই, কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ছেলেরা সেই লাশ দাফন করেছে, তাদের সৎকার করেছে, কৃষকের পাঁকা ধান ক্ষেত থেকে কেটে তাদের গোলায় তুলে দিয়েছে। আপনি যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন মিথ্যা মামলায়, সেই সময়েও এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সেদিন আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রণী ভূমিকায় ছিল।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আরও বলেন- আজকের এই শোকের দিনের আলোচনা সভায় দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই, আমাদের নেত্রী ( প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দু:খের সাগরে ভাসতে ভাসতে ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে আমাদের মাঝে এসেছিলেন। তিনি এসেই বলেছিলেন- আমার অবস্থা যদি আমার পিতার মতো হয়, আমার পিতার মতো জীবন দিতে হয়, আমি দিবো- তবু আমি বাবার স্বপ্ন পূরণ করব। সেই নেত্রীর বিরুদ্ধে যদি ষড়যন্ত্র হয়, ষড়যন্ত্রের গন্ধ আমরা পাই, কোন অবস্থাতেই সেই ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে বাস্তবায়িত হতে দেয়া হবে না। এজন্য সমস্ত জায়গায় ছাত্রলীগকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করতে হবে। মনে রাখতে হবে ষড়যন্ত্র ছিল, এখনও আছে।