আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ (১১ নভেম্বর)। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মণির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক যুব কনভেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংগঠনটি।

বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র দূরীকরণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যুবলীগ।

প্রতিষ্ঠার পর সংগঠনটিকে ঘিরে নানান আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। সর্বশেষ ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় নাম আসে অনেক নেতার। এতে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয় চেয়ারম্যানকে। বর্তমানে সংগঠনটির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুব সমাজের উন্নয়নে নানান কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে সংগঠনটি। গত চার দশকের বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে প্রাণ হারিয়েছেন সংগঠনটির অসংখ্য নেতাকর্মী।

যুবলীগ নেতারা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেকোনো রাজনৈতিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ মানুষের প্রয়োজনে তারা মাঠে ছিলেন। বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই তাদের নেতাকর্মীরা মানুষকে সাহায্য ও সহযোগিতা করছেন। এ সময়ে নানান সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

তারা বলছেন, শুধু সামাজিক নয়, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসাবে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালিয়েছেন তারা।

নানান ইতিবাচক কর্মকাণ্ড সংগঠনটি করলেও নেতাকর্মীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে প্রায় গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে যুবলীগ। ২০১৯ সালে দেশে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু করলে সংগঠনটির অনেক নেতার নাম আসে। গ্রেফতার কারা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে। অব্যাহতি দেওয়া হয় তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে। এছাড়া কেউ কেউ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির অভিযোগে বহিষ্কারও হন। সব মিলিয়ে ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে এই সংগঠনটি। অভিযোগ আসে নামে যুবলীগ হলেও দায়িত্ব পালনকারীদের নেতাদের বেশিরভাগের বয়স ছিল ৫০ বছরের বেশি।

সংগঠনটি ভাবমূর্তি উদ্ধারে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে চেয়ারম্যান হিসেবে হাল ধরেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে। গত বছরের শেষের দিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বাদ পড়েন আগের কমিটির বেশির ভাগ নেতা।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির সাতটি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে এখন পর্যন্ত। ১৯৭৪ সালের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। সে সময় যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪০ বছরের একটি বয়সসীমার বিধান ছিল।

১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় কংগ্রেসে যুবলীগের বয়সসীমা বিলুপ্ত করা হয়। তখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আমির হোসেন আমু । ১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা মহসীন মন্টু। ওই সময় তার বয়স ছিল ৩৭ বছর।

১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে ৪৭ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। ২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে ৪৯ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ কমিটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস। তখন কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী।

৪৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে যুবলীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সাড়ে ৯টায় বনানী কবরস্থানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি ও ১৫ আগস্টে সকল শহীদের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত।

বেলা ১১টায় শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ মণির কর্মচিত্র প্রদর্শনী হবে। আলোচনা সভা উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

বিকেল সোয়া ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে যুবলীগ। এতে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, বাপ্পা মজুমদার ও দলছুট, স্বাধীন বাংলা বেতারের বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী রফিকুল ইসলাম, বাউল সঙ্গীত শিল্পী সফি মন্ডল, ফকির সাহাবুদ্দিনসহ দেশবরেণ্য সংগীত শিল্পীদের গান পরিবেশনের কথা রয়েছে।