পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ডেকে ভর্ৎসনা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। নিষিদ্ধ ঘোষিত কট্টরপন্থী সংগঠন টিটিপির সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে যাওয়ায় এ ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
ডন অনলাইনের খবরে বলা হয়, বুধবার ইমরান খানকে তলব করেন সুপ্রিম কোর্ট। এদিন নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর আদালতে পৌঁছান তিনি।
মঙ্গলবার পাকিস্তানি তালেবান নামে পরিচিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে এক মাসের অস্ত্রবিরতি চুক্তি করেছে ইমরান খান সরকার।
২০১৪ সালে দেশটির আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলা এবং তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে সরকারের চলমান আলোচনা নিয়ে ইমরানকে প্রশ্ন করেন আদালত।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদের নেতৃত্বে বিচারপতি কাজী মোহাম্মদ আমিন আহমেদ ও বিচারপতি জিয়াউল হাসানকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে হাজির হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনি বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন। দেশের সরকার আপনার নেতৃত্বে চলে। কিন্তু তারপরও কিছু স্বীকৃত অপরাধীকে আপনি আলোচনার টেবিলে নিয়ে এলেন। এটা আপনি কী করলেন? কীভাবে করতে পারলেন? আমরা কি আবারও তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করছি?
বিচারপতি কাজী মোহাম্মদ আমিন আহমেদ ইমরান খানকে স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তান কোনো ছোট দেশ নয়।
তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ সেনাবাহিনী। কিন্তু তাদের (টিটিপি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কেন ফের আলোচনার টেবিলে ডাকা হলো?
২০১৪ সালে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের এপিএস ওয়ারসাক স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৪৭ জনকে হত্যা করেছিল টিটিপি। নিহতদের ১৩২ জনই ছিল শিশু।
শুনানির পুরো সময়ে ইমরান খানকে একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন তিন সদস্যের ওই বেঞ্চ। একপর্যায়ে সমন জারি করে শুনানি হচ্ছে জানিয়ে ইমরান খানকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বিচারপতিরা সেই সুযোগ না দিয়ে ইমরান খানকে একের পর এক এমন প্রশ্ন করতে থাকেন।
আদালতের প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, ২০১৪ সালের হামলা তার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক স্মৃতি, কারণ সে সময় পেশোয়ারে তার দল ক্ষমতাসীন ছিল।
ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) পারভেজ মোশাররফ যখন যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের সঙ্গে পাকিস্তানকে জড়ান, তখন তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, আর্মি স্কুলে ওই হামলার পর ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের একটি খসড়া হিসাব অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে পাকিস্তানের ৮০ হাজার প্রাণহানি হয়েছে। গভীর মানসিক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল মানুষ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর যুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তারা।
প্রধানমন্ত্রীকে ভর্ৎসনার পাশাপাশি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিও উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, যখন নিজের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে, তখন গোয়েন্দা সংস্থা কোথায় থাকে? পেশোয়ারের ঘটনায় সাবেক সেনা প্রধান বা সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো মামলা করা হয়েছিল?
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তদন্তকারী দল ঘটনার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি।