রাজশাহী ছাত্রলীগ নেতা শাহিন শাহ হত্যা মামলায় বিএনপিপন্থি এক সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ নয়জনের মৃত্যুদণ্ড ও ২২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (০৯ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ওএইচএম ইলিয়াস হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।
১২ বারের মতো পেছানোর পর রাজশাহীর চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১১ নভেম্বর আদালতে এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মামলার রায় ঘোষণার দিন ছিল। সেদিন ১২তম বারের মতো রায় ঘোষণার দিন পেছানো হয়।
নিহত শাহিন শাহ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ও এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রজব আলীর ছোট ভাই। ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট দুপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন শাহিন শাহ। শিক্ষানবিশ আইনজীবী শাহিন শাহ রাজশাহী কোর্ট কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তাকে হত্যার ঘটনায় তার ভাই যুবলীগ নেতা নাহিদ আক্তার নাহান বাদী হয়ে পরদিন নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান সিটি করপোরেশনের তৎকালীন ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুনসুর রহমানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলায় সাক্ষী ছিলেন ২৪ জন। আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
ঘটনার বিবরণে মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন নিহত শাহেন শাহর বড় ভাই রজব আলী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা মুনসুর রহমান। নির্বাচনে মুনসুর রহমান নির্বাচিত হন। নির্বাচন চলাকালে মুনসুর রহমান আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন। এ নিয়ে রজব আলী ও ছাত্রলীগ নেতা শাহিন শাহ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন। এর জের ধরে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট মুনসুর ও তার সমর্থকরা রজব আলীর মালিকানাধীন রজব অ্যান্ড ব্রাদার্সের গুদাম ঘর ও ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এছাড়া শহীদ কামারুজ্জামান স্মৃতি সংঘ ভাঙচুর করে তাদের বাড়িতে আক্রমণ করা হয়। রজবসহ তার ভাইদের খুঁজে না পেয়ে হামলাকারীরা ঘোষণা দেন তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করা হবে।
পরদিন ২৮ আগস্ট গুড়িপাড়া সাকিনের ক্লাব মোড়ে শাহিন শাহকে পেয়ে আসামিরা তাকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তার কাছে থাকা মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করা হয়। এরপর পিস্তলের ফাঁকা গুলি করতে করতে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা শাহিন শাহকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।