নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর এটি তৃতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে সাত এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৮২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার রয়েছেন পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। প্রচার-প্রচারণায় একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও এ নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত কোনও সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি), খেলাফত মজলিশের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাও. মো. মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল ইসলাম (ঘোড়া), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি)। এ ছাড়া সিটির ২৭ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটাররা মনে করছেন, মেয়র পদে মূল লড়াইটা হবে আইভী ও তৈমুরের মধ্যে।
জানা গেছে, মোট ভোটারের দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন পুরুষ ও দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন নারী। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের চার জন ভোটার রয়েছেন। নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের ১৯২ কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ কক্ষে ভোটগ্রহণ চলবে। এ জন্য নারায়ণগঞ্জে দুই হাজার ৯১২টি ইভিএম মেশিন আনা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় দেড়গুণ ইভিএম রাখা হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। শনিবার দুপুর থেকে কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হয়।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯২ কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘সবগুলো কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় রেখে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।’
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ১৯২ কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫ হাজারেরও বেশি সদস্য নিয়োজিত আছেন। প্রতি কেন্দ্রে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬ জন সদস্য। পুলিশের ২৭ ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আছেন। এ ছাড়া পুলিশের ৬৪টি মোবাইল টিম; প্রতি টিমে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য আছেন। নির্বাচনি মাঠে র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স ৩, চেকপোস্টে ছয়, টহলে সাত ও দুটি স্ট্যাটিক টিম আছে। এ ছাড়া এই নির্বাচনে আছে বিজিবির ২০ প্লাটুন সদস্য।
নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য ১৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়। পেনাল কোডের অধীনে তারা মামলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ পরিচালনা করবেন। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন নির্বাচনি এলাকায় কাজ করবেন তারা। এ ছাড়া ২৭টি ওয়ার্ডে থাকবেন ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) রাত থেকে নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোনও যান্ত্রিক বাহন চলাচলও নিষিদ্ধ। এ ছাড়া নির্বাচনি এলাকায় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।