চলমান নারী বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ১০ রানে হারিয়ে প্রথম জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচ জিতে ইতিহাসও গড়েছে টাইগ্রেসরা।
প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে আসরটিতে জয় পেলেন সালমান-নিগাররা। এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা বাংলাদেশ মেয়েরা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসেও সর্বোচ্চ রানের মাইলফলক পার করেছে। আগের রেকর্ডটিও এই পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল।
সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোরে হ্যামিল্টনে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। যেখানে প্রথমে ব্যাট করা টাইগ্রেসরা নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রান করে। জবাবে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৫ রানে থামে।
টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ মেয়েরা ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলগত ইনিংসের সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে। এর আগে ২০১৯ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪৯.৫ ওভারে ৯ উইকেটের বিনিময়ে ২১১ রান তুলেছিল বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল। যদিও সেই ম্যাচে রান তাড়া করতে নেমেছিল বাংলাদেশ।
শুধু দলগত রেকর্ডই নয়, বরং বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট হাতে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েন ফারজানা হক। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের এই ম্যাচে তিনি ৫টি বাউন্ডারির সাহায্যে ১১৫ বলে ৭১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন। ফলে তিনি মেয়েদের ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীতে পরিণত হন। তিনি টপকে যান সতীর্থ রুমানা আহমেদের রেকর্ড।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে ৪৪টি ম্যাচে রুমানার সংগ্রহ ছিল সাকুল্যে ৯১৫ রান। ফরজানা দাঁড়িয়েছিলেন ৪৩টি ম্যাচে ৯০১ রানে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুমানা করেন ১৬ রান। ফলে ৪৫ ম্যাচে তার সার্বিক সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯৩১ রান। ফরজানা ৪৪ ম্যাচে পৌঁছে যান ৯৭২ রানে।
এছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এদিন ৬টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৫৫ বলে ৪৪ রান করেন শারমিন আখতার। একটি বাউন্ডারির সাহায্যে ৬৪ বলে ৪৬ রান করেছেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা।
২৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান শুরুটা করে দাপুটে ২৩.৪ ওভারে ৯১ রানে তোলেন দলের দুই ওপেনার নাহিদা খান ও সিদরা আমিন। অবশেষে রুমানা আহমেদ নাহিদাকে বোল্ড করলে এই জুটি ভাঙে। ৬৭ বলে ৩টি চারে ৪৩ করেন নাহিদা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অধিনায়ক বিসমাহ মারুফের সঙ্গে আরও ৬৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সিদরা।
এবার বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন জাহানারা আলম। ৪৮ বলে ৩১ করা বিসমাহ শারমিন আখতারকে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন। দলীয় ১৮৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। ওমাইমাকে ১০ রানে ফেরান ফাহিমা খাতুন। এই উইকেটের পরই মূলত ধস নামে পাকিস্তান ইনিংসে। বাংলাদেশ বোলারদের বিশেষ করে ফাহিমার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৫ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
দলীয় ৪৪তম ওভারেই ফাহিমার করা বলে ৩ উইকেটের পতন হয়। ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে আলিয়া রিয়াজ ও ফাতিমা সানাকে এলবি করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান ফাহিমা। তবে এটি পূরণ না হলেও ওভারের শেষ বলে প্রতিপক্ষের সিদরা নওয়াজ রান আউট হয়।
অপরপ্রান্তে দৃঢ় ব্যাটিং করে পাকিস্তানকে ট্র্যাকে রাখেন ওপেনার সিদরা আমিন। তিনি প্রথম নারী পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরির দেখা পান। তবে ৪৮তম ওভারের পঞ্চম বলে এই ব্যাটার রান আউট হলে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা পুরোপুরি দেখা দেয়। আমিন ১৪০ বলে ৮টি চারে ১০৪ রান করেন।
বাংলাদেশ বোলার ফাহিমা শেষের ব্রেকথ্রুসহ ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরাও নির্বাচিত হন। ২ উইকেট পান রুমানা। আর একটি করে উইকেট দখল করেন সালমা খাতুন ও জাহানারা।