
দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারীগণের জন্য কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদান আমদানীর ক্ষেত্রে সোর্স উন্মোক্তকরণের কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানতে গড়িমসি করছে বালাইনাশক কারিগরী উপদেষ্টা কমিটি (পিটাক)।
বালাইনাশক (পেস্টিসাইডস) আইন, ২০১৮ এবং বালাইনাশক বিধিমালার কোথাও সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকার কারণে সোর্স উন্মুক্তকরণের জটিলতার জন্য পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদানের বাজারমূল্য যাচাই বাছাইয়ের সুযোগের সীমাবদ্ধতায় দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারীগণ প্রতিযোগীতামূলক বাজারে উচ্চমূল্যে বালাইনাশকের কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদান ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে করে বালাইনাশকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক পর্যায়ে তার প্রভাব পড়ছে। ফলে দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারী ও কৃষক সমাজ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারাস এসোসিয়েশন কর্তৃক কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত পত্রে কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদান আমদানির ক্ষেত্রে দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারীগণের জন্য সোর্স উন্মুক্তকরণের বিষয়টি জরুরিভাবে নিরসন কল্পে কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদান আমদানীর ক্ষেত্রে নমুনার ল্যাব টেষ্টের মাধ্যমে দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারীগণের জন্য সোর্স উন্মুক্তকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও বালাইনাশক কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (পিটাক) সভাপতি এবং বালাইনাশক কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (পিটাক) সদস্য সচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এর পরিচালককে চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়, “বালাইনাশক (পেন্টিসাইডস) আইন, ২০১৮, The Pesticide Rules, 1985 এবং বালাইনাশক বিধিমালা ২০১০ এ সোর্স পূর্ণ বন্ধ /সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা নেই। তথাপিও পিটাকের ৬৯তম ও ৭৭তম সভায় যথাক্রমে সোর্স বন্ধ রাখা এবং রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির ০২ (দুই) বছর পর পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা বোধগম্য নয়। সরকারকে সুপারিশ প্রদানের জন্য বালাইনাশক (পেন্টিসাইডস্) আইন, ২০১৮, The Pesticide Rules, 1985 এবং বালাইনাশক বিধিমালা ২০১০ এ বালাইনাশক কারিগরী উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা কার্যবিবরণীতে সুপারিশের মাধ্যমে সরকারের অনুমোদনের আলোকে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।
বর্ণিত অবস্থায়, কাঁচামাল ও সহযোগী উপাদান আমদানীর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারীগণের জন্য সোর্স উন্মুক্তকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরও সোর্স উন্মুক্তকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে সংশ্লিষ্ট কমিটি।
বর্তমানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ও আমদানিকারকদের চাপিয়ে দেওয়া খসড়া নীতিমালায় বালাইনাশক উৎপাদনকারী কোম্পানি নিবন্ধনের দু’বছের মধ্যে সোর্স/ প্রিন্সিপাল কোম্পানি পরিবর্তন করতে পারবে না। একটি প্রিন্সিপালের কাছ থেকে বালাইনাশক উৎপাদনের জন্য মূল উপাদান ও সকল সহযোগী উপাদান (৮ থেকে ১০ টি) সংগ্রহ করতে হবে। এতে সেই প্রিন্সিপালের এজেন্টের কাছে বাংলাদেশী উদ্যোক্তা, উৎপাদক ও আমদানিকারক জিম্মি হয়ে পড়বে। এছাড়া প্রিন্সিপালের এজেন্ট অধিক মুনাফা ও সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। প্রিন্সিপাল কোম্পানি মূল উপাদান ও সহযোগী উপাদানের কোন একটি সরবরাহ বন্ধ করলে স্থানীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারী কোম্পানির বন্ধ হয়ে যাবে কারণ দ্বিতীয় কোন সোর্স থেকে আমদানি করার আইনগত বৈধতা নেই। এটি পরিবর্তন করে সোর্স উন্মুক্ত করার কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ও আমদানিকারকদের চাপে বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে সংশ্লিষ্ট কমিটি, অভিযোগ বালাইনাশক উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর।
বাংলাদেশের ফার্মাসিটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিও সকল ঔষধ উৎপাদন করছে একই পদ্ধতিতে। এতে ফার্মাসিটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিতে মানের কোনো ক্ষতি হয়নি। বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প এক সময় আমদানি নির্ভর ছিলো। বর্তমানে ফার্মাসিটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি বিকশিত হয় বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কাজে লাগছে। অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনে বৃদ্ধির জন্য বালাইনাশক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর। দুটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বালাইনাশক ব্যবসার প্রায় ৮০ শতাংশ দখল করে রেখেছে এবং বাকিটুকু কিছু আমদানি নির্ভর কোম্পানি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সাথে মিল রেখে উচ্চমূল্যে বাজারজাত করছে। কয়েকটি দেশীয় কোম্পানি বালাইনাশক উৎপাদনের কারখানা করলেও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ও আমদানিকারকদের চাপিয়ে দেওয়া নীতিমালার কারণে উৎপাদন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পেটেন্ট এর কথা বলে বালাইনাশকের মূল্য প্রায় শত গুণ বেশি রাখছে এবং আমদানিকারকরাও সেই সুবিধা নিয়ে অধিক মূল্য রাখছে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। সরকার উদ্যোগ নিলে ফার্মাসিটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির মত বালাইনাশক শিল্পেও বাংলাদেশ ২০৪১ সাল পর্যন্ত পেটেন্ট উন্মুক্ত সুবিধা পেতে পারে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারাস এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ন্যাশানাল এগ্রিকেয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল বলেন, বর্তমান সরকারের শিল্পবান্ধব নীতিমালার কারণে সব খাতে শিল্প স্থাপন হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়ন করে বালাইনাশক সংশ্লিষ্ট কমিটি বালাইনাশক শিল্পে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় শিল্প শক্তিশালী করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার শিল্পবান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে বলে আশা করি।









