সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন চায় বিএনপি: মির্জা ফখরুল

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটনার তদন্তে ‘নিরপেক্ষ কমিশন’ গঠনের দাবি তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার (৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মনে করি এ ঘটনার জন্য অবিলম্বে একটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত। এর জন্য যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করা দরকার। কী ভয়াবহ? মানুষের বডি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, একেবারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গেছে চেনা যাচ্ছে না। হঠাৎ করে যে বিস্ফোরণ হবে- এটা তারা বুঝতে পারেনি।

কেমন তদন্ত কমিশন চান জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি কিন্তু এখন পর্যন্ত অতীতের কোনো ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেখিনি। আমরা যখন নিরপেক্ষ কথাটা বলি, এটা মিন করি যে, দল নিরপেক্ষ এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই যারা এক্সপার্টস আছেন, যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, সত্যিকার অর্থে বিষয়গুলো যারা বোঝেন তাদের দিয়ে তদন্ত করা।

শনিবার (৪ জুন) দিনগত রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে বেসরকারি ওই কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এ ঘটনায় রোববার (৫ জুন) পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

এ সরকার কী করছে প্রশ্ন করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গতকাল একজন আর্মির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের কথা টেলিভিশনে শুনছিলাম- তিনি বলছিলেন যে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। আজকে আমি এ জায়গায় প্রশ্ন করতে চাই- এ সরকার তাহলে কী করছে? আমি যে কথাটা বলছি, তথাকথিত অবকাঠামো নির্মাণের নামে নিজেদের পকেট ভারী করা, দুর্নীতি করা- এটাই তাদের মূল লক্ষ্য। জনগণের কল্যাণের জন্য, জনগণের সেফটি-সিকিউরিটির জন্য, মানুষকে ভালো রাখার জন্য এ সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এ সরকার যেহেতু নির্বাচিত সরকার না, সেই কারণে তাদের জবাবদিহিতা নেই।

সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণে দেশের পোশাকশিল্পে অথবা অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অলরেডি এ নিয়ে কথা-বার্তা শুরু হয়েছে। কারণ যেসব ঘটনা ইতোমধ্যে তাজরীন ফ্যাক্টরি বা অন্যান্য ফ্যাক্টরিগুলো এবং রানা প্লাজার ঘটনার ব্যাপারে গার্মেন্টস যেভাবে একটা নেগেটিভ অবস্থায় এসেছিল। এটা পরবর্তীকালে যারা বায়ার ছিল বা বিদেশিরা বাংলাদেশের সঙ্গে কেনাকাটা করে তাদের সহযোগিতায় আমাদের গার্মেন্টস প্রডিউসার ও মালিকদের আগ্রহের কারণে সেই ব্যাপারটা অনেকটা কাটিয়ে এসেছে। কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত সেভাবে আসেনি। এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডগুলো ঘটছে সেইগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মতো প্রয়োজনীয় যে লোকবল, প্রয়োজনীয় যেসব উপকরণ সেসব নেই।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ এখন শোষকের দলে পরিণত হয়েছে। এখন আর শোষিতের পক্ষে কথা বলার তাদের সুযোগ নেই। কারণ তারাই এখন শোষক হয়ে গেছে। শোষণ করছে বাংলাদেশকে। এখন তারা লুট করছে, দুর্নীতি করছে, অর্থ পাচার করছে। এ ভয়াবহ-মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটলো সম্পূর্ণভাবে তাদের ব্যর্থতার জন্য। আমি পত্রিকায় দেখলাম যে, প্রধানমন্ত্রী একটু সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, পদ্মা ব্রিজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তাতে তো এ সমস্যার (সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ) সমাধান হয় না।

জাতীয় শোক ঘোষণা করা উচিত ছিল জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ঘটনার পর জাতীয় শোক ঘোষণা করা উচিত ছিল। অন্যান্য যেকোনো সভ্য দেশ হলে তাই করতো। আমেরিকাতে যে বাচ্চাগুলো মেরে ফেললো তখনই আমেরিকা জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। আপনি দেখেন, আসলে এ সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা জনগণের পালস বোঝে না, জনগণ কী চাচ্ছে, কী আশা করছে- সেগুলো নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই।