তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষিবিদদের নানা উদ্ভাবন ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শুধু পৃথিবীকে নয়, বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকেও অবাক করে দিয়ে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এই নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে দেশে কৃষিজমি রক্ষা একান্ত প্রয়োজন।’
রোববার ( ১৯ জুন ) দুপুরে রাজধানী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি ও গণমাধ্যম’ সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, প্রতি বছর দেশে এক শতাংশ কৃষি জমি কমে যায়। এভাবে প্রতি বছর যদি দুই লাখ একর কৃষি জমি হারিয়ে যায়, তাহলে শেষ নাগাদ এই দেশে আর কৃষি জমি থাকবে না। ২০ বছর পর বাংলাদেশে লোকসংখ্যা আরো ৪ কোটি বৃদ্ধি পাবে আর ৪০ লাখ একর কৃষি জমি কমে যাবে। তখন বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তার কি হবে সেজন্য জনসচেতনতা যেমন দরকার একইসাথে যারা এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন তাদের এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
কৃষি সচিব মো: সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে কৃষি তথ্য সার্ভিস আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায় স্বাগত বক্তব্য দেন ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস ড. এম এ সাত্তার মন্ডল মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. হাছান বলেন, ‘আমার কাছে যখন চট্টগ্রামের কোনো রাস্তা আরো প্রশস্ত করার প্রস্তাব আসে তখন আমি সেখানে যে অনেক কৃষি জমি নষ্ট হবে, পাহাড়-বন কাটতে হবে, পরিবেশ-প্রকৃতি সম্পর্কে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সত্যিকার অর্থে রাস্তা প্রশস্ত করার প্রয়োজন নির্ধারণ করতে বলি। একইসাথে এখন কৃষি শ্রমিকের যে মজুরি তা দিয়ে কৃষিতে খুব বেশি লাভ থাকে না বলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। কৃষিকে পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে অনাবাদি জমিতে আবাদ করা গেলে খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে। গণমাধ্যম এক্ষেত্রে জনগণ ও এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে।’
পরিবেশবিদ ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পৃথিবীতে আয়তনের দিক দিয়ে ৯২তম বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং মাথাপিছু সর্বনি¤œ কৃষিজমির দেশ। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত এ দেশের নিত্যসঙ্গী। এ সমস্ত কারণে এ দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও আমরা ধান ও মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম। গণমাধ্যম মানুষকে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। মানুষের জীবনের সাথে মিশে থাকা কৃষির এ বিষয়গুলো যদি তারা আরো বেশি তুলে ধরে তাহলে দেশ উপকৃত হবে, খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা সহজ হবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন মাঠে বড় ধরনের কোনো ফসল নেই। এ বন্যায় যতটুকু ক্ষতি হবে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। সেজন্য ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও শুরু করা হয়েছে। ফলে এ বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতি হবেনা।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি হবেনা। সারাদেশে খুববেশি বীজতলা করা হয়নি এখনো। যা হয়েছে সেটাও নষ্ট হলে খুব সমস্যা হবে না। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বীজ সংরক্ষিত আছে, পরবর্তীতে সেগুলো চাষীদের দেওয়া হবে। তবে আউশের ক্ষতি একটু বেশি হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন ১১ লক্ষ হেক্টর আউশের লক্ষ্য ছিলো, এর মধ্যে ২২ হাজার হেক্টর এখন পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ৩ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন শাকসবজি আছে, সেগুলোর কিছু ক্ষতি হবে।
তবে এজন্য আমরা পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখেছি, যদি বড় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ সেটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে, জানান কৃষিমন্ত্রী।
চ্যানেল আই পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, দৈনিক জনকণ্ঠের চীফ রির্পোর্টার কাওসার রহমান ও দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম ইফতেখার মাহমুদ আলোচনায় অংশ নেন।