বাংলাদেশের আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে লাখখানেক রোহিঙ্গাকে যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসন করার প্রস্তাব দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
গত শুক্র ও শনিবার (২৪ ও ২৫ জুন) রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে ২৬তম কমনওয়েলথ সম্মেলনের সাইডলাইনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রুসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এমন প্রস্তাব দেন বলে সোমবার (২৭ জুন) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
হাইকমিশন জানায়, ড. মোমেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, যুক্তরাজ্য ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের বিশ্বনেতা। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক লাখ রোহিঙ্গাকে একটি উন্নত জীবন দিতে পুনর্বাসনের বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে যুক্তরাজ্য। এতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দেওয়া বাংলাদেশের উদার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি ড. মোমেনের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যদিও যুক্তরাজ্য এটির দিকে নজর দিতে পারে, তবে রোহিঙ্গা সংকটের সর্বোত্তম সমাধান মিয়ানমারে তাদের স্বদেশে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন।
মোমেন ট্রুসকে জানান, মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অভাবে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না।
মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি ড. মোমেনকে আশ্বস্ত করেন যে আসিয়ান এবং জি৭ দেশগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াবেন।
কিগালিতে প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে ঢাকা ও ব্রিটেনের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা যৌথভাবে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে সম্মত হন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশে বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ড. মোমেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে ইস্যুকৃত শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের কমিয়ে আনার কথা তুলে ধরেন।
বৈঠকে মোমেন-ট্রুস বর্তমান ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হন। এছাড়া বৈশ্বিক খাদ্য ও শক্তি সরবরাহের চেইন পুনরুদ্ধারে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সম্মত হন তারা।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। বৈঠকে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম উপস্থিত ছিলেন।