প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর মৎস্য পণ্য নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। সুস্থ-সবল ও মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে নিরাপদ আমিষের অবদান অনস্বীকার্য। এ লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
রোববার থেকে শুরু হওয়া ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষে শনিবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ উপলক্ষে দেশের মৎস্য চাষি ও মৎস্যজীবীসহ মৎস্য খাতসংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, বিপুল সম্ভাবনাময় এ মৎস্য খাতের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাই আরও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবেন। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রূপকল্প-২০৪১’ অর্জনের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ একটি অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতির সর্বোচ্চ আহরণ মাত্রা নির্ধারণ করে সমুদ্র মৎস্য সম্পদের স্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাগরে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া লং লাইনার ও পার্সসেইনার নৌযানের মাধ্যমে একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনা এবং সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সামুদ্রিক জলসীমায় অবৈধ, অনুল্লিখিত এবং অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ নিয়ন্ত্রণ, মৎস্য সম্পদের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নৌকায় ভেসেল মনিটরিং সিস্টেম ও অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্যের মজুত নিরূপণ, তার যথাযথ সংরক্ষণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ একটি নবায়নযোগ্য সম্পদ, যার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ, আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে মৎস্য খাতকে চিহ্নিত করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার সবার অংশগ্রহণে মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আজ সর্বজনবিদিত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়, বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে পঞ্চম, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাসিয়া উৎপাদনে অষ্টম ও ফিনফিস উৎপাদনে ১২তম স্থান অধিকার করেছে। ইলিশ আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম, তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়ায় তৃতীয়।
শেখ হাসিনা ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।