বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কন্টকাকীর্ণ পথে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদান ও গুরুত্ব নিয়ে যতটা আলোচনা হওয়ার কথা তা হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন অপরিসীম ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও বিচক্ষণতার প্রতীক বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত না থেকেও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস ছিলেন বেগম মুজিব। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি জাতির পিতার পাশে থেকে দেশ ও জাতির মঙ্গলাকাঙ্ক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। তার কর্মের মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন একটি সংগ্রামমুখর জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যে জীবন কোটি জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের সাথে দ্বিধাহীনভাবে যুক্ত হয়েছিল ত্যাগ ও নিপীড়ন মোকাবেলা করবার দৃপ্ত প্রতিজ্ঞায়।
বেগম মুজিব সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- “আমার স্ত্রীর মতো সাহসী মেয়ে খুব কমই দেখা যায়। আমাকে যখন পিন্ডির ফৌজ বা পুলিশ এসে জেলে নিয়ে যায়, আমার উপর নানা অত্যাচার করে, আমি কবে ছাড়া পাব বা কবে ফিরে আসব ঠিক থাকে না, তখন কিন্তু সে কখনো ভেঙে পড়েনি। আমার জীবনের দুটি বৃহৎ অবলম্বন। প্রথমটি হলো আত্মবিশ্বাস, দ্বিতীয়টি হলো আমার স্ত্রী আকৈশোর গৃহিণী।”
ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধু যে পরিবেশ ও পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন, শেখ ফজিলাতুন নেছাও সেই একই পরিবেশে বড় হয়েছেন, এমনকি একই পরিবারে। স্বাভাবিকভাবেই মুজিবের আদর্শ, তাঁর সহজাত মানসিকতা, সাহস ও আত্মবিশ্বাসী সত্ত্বা দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছেন। সেই কিশোরী বয়স থেকে সকল ক্ষেত্রে স্বামী মুজিবকে সমর্থন করার মধ্যে এটি লক্ষ করা যায়। জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে তিনি প্রশ্নহীনভাবে সমর্থন দিয়েছেন, মনোবল ও সাহস জুগিয়েছেন, অপরিসীম প্রেরণা জুগিয়েছেন। এর সবই তিনি করে গেছেন একান্ত নিভৃতে থেকে।
শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ বংশের নাম তখন ওই অঞ্চলে বেশ পরিচিত। স্বামী শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর চাচাতো ভাই ছিলেন। শেখ ফজিলাতুন নেছার পিতামহ শেখ মোহাম্মদ কাশেম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতামহ শেখ আব্দুল হামিদ ছিলেন চাচাতো ভাই। শেখ ফজিলাতুন নেছা’র ডাকনাম ছিল রেনু। তাঁর পিতা শেখ জহুরুল হক ও মাতা হোসনে আরা বেগম। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি পিতা-মাতা উভয়কেই হারান। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি ভাবী-শাশুড়ি এবং বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুনের কাছে সন্তানের মতো করে বড় হতে থাকেন।
পিতামহের ইচ্ছায় ১৯৩৮ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। যদিও তাঁদের সংসারজীবন শুরু হয়েছিল অনেক পরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন কোলাকাতায় পড়াশোনা করতেন। ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় এবং দুর্ভিক্ষের সময় তাঁর স্বামী যখন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বিভিন্নভাবে মানুষের সেবা করেছেন, তাঁর সাথে একইরকম মনোভাব নিয়ে সার্বক্ষণিক সমর্থন দিয়ে গেছেন শেখ ফজিলাতুন নেছা। এমনকি যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রচারণা ও সার্বিক কর্মকাণ্ডে অপরিসীম সহযোগিতায় বেগম মুজিবকে একান্তভাবে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠন করতে রাস্তায় নেমে লিফলেট বিতরণ করেছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব।
বঙ্গমাতার জ্যেষ্ঠ কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন- “বঙ্গবন্ধু জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলো কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তাঁর অবর্তমানে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন পরিচালনা করা- প্রতিটি কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন নেপথ্যে থেকে।
তাঁর স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল, আন্দোলন চলাকালীন সময়ের প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ বাঁচিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। আবার আওয়ামী লীগের কার্যকরী সংসদের সভা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে চলাকালীন সময়ে তিনি নিজের হাতে রান্নাবান্না করতেন এবং খাদ্য পরিবেশন করতেন। এই সংগঠনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত করার কাজে তাঁর অবদান অপরিসীম। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চক্ষু বাঁচিয়ে সংগঠনকে সংগঠিত করতেন, ছাত্রদের নির্দেশ দিতেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতেন।”
বেগম ফজিলাতুন নেছা’র পিতামহ শেখ মোহাম্মদ কাশেম তাঁর সমস্ত সম্পত্তি বেগম ফজিলাতুন নেছা ও তাঁর আরেক বোনকে দান করে গিয়েছিলেন। দাদার দিয়ে যাওয়া সম্পত্তি থেকে যে অর্থ আসত, তা তিনি জমিয়ে রাখতেন। নিজের সাধ-আহ্লাদ পুরণে তা খরচ না করে স্বামীর হাতে তুলে দিতেন। রাজনীতি করতে যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা তিনি বুঝতেন এবং স্বামীর পথচলাকে সহজ করতেই ছিল তাঁর এই প্রয়াস।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে খাজা নাজিমুদ্দিনও একই ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে এদেশের মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সেই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করায় ’৪৮ সালের ১১ মার্চ সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। কারাগারে অন্তরীন তরুণ শেখ মুজিবকে নবগঠিত সংগঠনের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক করা হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার হওয়ায় আবারও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫০ সালে কারারুদ্ধ হয়ে টানা দু’বছর কারাগারে থাকতে হয়। ১৯৫৮ সালে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাঁকে ১৪ মাস কারান্তরীণ রাখা হয়।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝোলাবার সব আয়োজন সম্পন্ন করলে ১৯৬৯ এর ২১ জানুয়ারি ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করে আনে এবং রেসকোর্স ময়দানে এক ছাত্র-গণ-সম্বর্ধনায় তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের দীর্ঘ ১৪ বছর বঙ্গবন্ধুকে কারাগারেই কাটাতে হয়েছে। দিনের পর দিন বঙ্গবন্ধুর কারাগারে থাকা অবস্থায় বেগম মুজিব শত সংকট মোকাবেলা করে সংসার সামলে ছেলেমেয়েদের লালন-পালন করেছেন, তাদেরকে পড়াশোনা করিয়েছেন। কোনদিন স্বামীর প্রতি এতটুকু অভিযোগ করা তো দূরে থাক, সবসময় আপসহীন থেকে তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্যের পানে এগিয়ে যেতে নিরন্তর উৎসাহ যুগিয়ে গেছেন।
মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা লিখেছেন- “জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি, আমার বাবা কারাবন্দি। মা তাঁর মামলার জন্য উকিলদের সঙ্গে কথা বলছেন, রাজবন্দি স্বামীর জন্য রান্না করে নিয়ে যাচ্ছেন, গ্রামের শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীয়-স্বজনের খবরাখবর রাখছেন। আবার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, যারা বন্দি তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে টাকাও পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কারাগারে দেখা করতে গিয়ে স্বামীর কাছে বাইরের সব খবর দিচ্ছেন এবং তাঁর কথাও শুনে আসছেন। কাউকে জানানোর থাকলে ডেকে জানিয়েও দিচ্ছেন। এরপর আছে তাঁর ঘর-সংসার। এরমধ্যে ছেলেমেয়েদের আবদার, লেখাপড়া, অসুস্থতা, আনন্দ-বেদনা- সবকিছুর প্রতিও লক্ষ রাখতে হয়। এতকিছুর পরও তাঁর নিজের জন্য সময় খুঁজে নিয়ে তিনি নামাজ পড়ছেন, গল্পের বই পড়ছেন, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করছেন।
কী ভীষণ দায়ভার বহন করছেন! ধীর, স্থির এবং প্রচণ্ডরকম সহ্যশক্তি তাঁর মধ্যে ছিল। বিপদে, দুঃখবেদনায় কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। বরং সেখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে চেষ্টা করেছেন- এটাই ছিল তাঁর চরিত্রের দৃঢ়তা, তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রকাশ।”
কবি সুফিয়া কামাল বলেছেন, “মুজিবের কথা বলতে গেলে মুজিবের স্ত্রীর কথা বলতে হয় এত ধৈর্যশীল, এত শান্ত, এত নিষ্ঠাবতী মহিলা খুব কমই দেখা যায়। মুজিবের বছরের বারো মাসের বেশিরভাগ সময় কেটেছে জেলখানায়। যখনি শুনেছি মুজিবকে ধরে নিয়ে গেছে, ছুটে গিয়ে দেখেছি, মুজিবের স্ত্রী অবিচল মুখে কাপড়, বিছানা-বালিশ গুছিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে. বলছে, আপনার ভাইতো জেলে গেছে।”
২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে সারাদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগের দিন ২২ মার্চ রাতে খেতে বসে বঙ্গবন্ধুকে চিন্তাক্লিষ্ট দেখে বেগম মুজিব জানতে চেয়েছিলেন, “পতাকা ওড়ানোর ব্যাপারে কি কোন সিদ্ধান্ত নিলেন?” বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- “না, নিতে পারিনি। আমি পতাকা ওড়াতে চাই। একটাই ভয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এখনো ঢাকায়। পাকিস্তানীরা বলবে, আলোচনা চলা অবস্থাতেই শেখ মুজিব নতুন পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এই অজুহাত তুলেই তারা নিরস্ত্র বাঙালির উপর সামরিক হামলা চালাবে।”
এ অবস্থায় বেগম মুজিব পরামর্শ দিয়েছিলেন- “আপনি ছাত্র নেতাদের বলুন, আপনার হাতে পতাকা তুলে দিতে। আপনি সেই পতাকা বত্রিশ নম্বরে ওড়ান। কথা উঠলে আপনি বলতে পারবেন, আপনি ছাত্রজনতার দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন।”
বঙ্গবন্ধু আর কোন কথা না বলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেন, পরদিন ২৩ মার্চ তিনি ৩২ নম্বরে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়াবেন। উপস্থিত নেতাকর্মীরা সেই ঘোষণায় উৎফুল্ল চিত্তে জয় বাংলা শ্লোগানে মুখর করে তোলে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী পরদিন পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে এবং র্যালী করে সেই পতাকা ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে হস্তান্তর করেন। সেদিন সচিবালয় থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশের সমস্ত সরকারি বেসরকারি অফিস ও বাসাবাড়িতে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট ভবনেও এদিন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে। যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাই কমিশন ও সোভিয়েত কনসুলেটে সকাল থেকেই স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়েছিল। চীন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল নিজেদের পতাকার পাশে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ালেও জনদাবির মুখে তা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এদিন সাধারণ ছুটি পালিত হয়।
এর আগে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের আগে একই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল এবং দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন পক্ষের নানামুখি প্রস্তাব ও পরামর্শে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া না দেওয়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ বঙ্গবন্ধুকে তিনি কারো পরামর্শ না শুনে নিজে যা সঠিক মনে করেন, তাই বলতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। যেখানে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। বঙ্গবন্ধু তাই করেছিলেন। এমনই ধী-শক্তিসম্পন্ন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বস্তুত তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনের কারিগর। তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রখরতা ও চিন্তার দূরদর্শিতা দিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে বাঙালির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে পথনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
তাঁর সুমহান ব্যক্তিত্ব ও অপরিসীম ত্যাগের সাথে পরিচয় ঘটানোর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশমাতৃকার প্রতি নির্মোহ চিত্তে আত্মনিবেদনের তাড়নাকে জাগ্রত করতে পারি। মহীয়সী এই মমতাময়ী জননীর জন্মদিনে আমার কৃতজ্ঞ চিত্তের অশেষ শ্রদ্ধা।
লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।