ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদরাসাগুলোর ফাজিল, কামিল শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে বকশি বাজারের সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার মূল ফটকের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাদরাসা-ই-আলিয়ার শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া ও ফল প্রকাশসহ শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছেন। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও দীর্ঘ সময়ে এর সুফল মিলছে না। জনবল সংকটসহ নানান অজুহাতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার মান উন্নয়নের ভূমিকায় রাখতে পারছেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তারা অভিযোগ করেন, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল অনার্স প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষ— ২০২০ এর চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এগুলোর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে মার্চে ও চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা এপ্রিল মাসে শেষ হয়েছে।
সে হিসাবে প্রায় পাঁচ মাসেও ফল প্রকাশ করা হয়নি। এর আগে ফাজিল অনার্স প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষ— ২০১৯ এর চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলও দীর্ঘ ১১ মাস ২৬ দিন পর প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রতিটি বর্ষে দীর্ঘ সময় পর চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল দেওয়ার কারণে সেশন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং তৈরি হচ্ছে সেশনজট।
আবু নোমান রুমি নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আসুক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তিন মাসের মধ্যে আমাদের ফল প্রকাশ করার নিশ্চয়তা দেওয়া হোক। একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার পর কেন ছয় থেকে সাত মাস ফলের জন্য অপেক্ষা করবেন। দায়িত্বে যারা আছেন বিষয়টি তাদের আমলে নিতে হবে। তা নাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে বাধ্য হবে।
এছাড়াও আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য জানার জন্য ফোন করলে খারাপ আচরণের শিকার হতে হয় উল্লেখ করে মাহমুদুল হাসান মাহমুদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, যেকোনো প্রয়োজনে ও তথ্য জানার জন্য আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন করলে যথাযথ সহযোগিতা পাওয়া যায় না। উল্টো তারা খারাপ আচরণ করেন। আমরা বার বার যদি এ ধরনের খারাপ আচরণ পাই তবে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করব। প্রয়োজনে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেবো।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে—
১) সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে ফাজিল (অনার্স ও পাস), কামিল (স্নাতকোত্তর) সহ সকল বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে।
২) ফল প্রকাশের পর দ্রুত সার্টিফিকেট ও মার্কশিট আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সকল মাদরাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো বর্ষের সেশনজট করতে পারবে না। করোনার জন্য যে সেশনজট তৈরি হয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে সময় কমিয়ে এনে আগেই চূড়ান্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রতিটি বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট হেল্প সেন্টার স্থাপন করতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধান করতে পারে।
৫) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সন্তোষজনক ও ভালো আচরণ করতে হবে।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন আবু রায়হান, নাইমুল ইসলাম মাইফুল, ওমর বোস্তামীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।