মুন্সীগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত শাওনের লাশ তার নিজ গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার মুরমা ঈদগা মাঠে জানাজা শেষে তাকে মুরমা সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে সংঘর্ষের করা মামলায় নিহত শাওনকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাওনের লাশ নিজ বাড়িতে আনা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতরণ হয়। তাকে দেখতে গ্রামের শত শত মানুষ ভিড় জমায়।
রাত ৯টার দিকে নিহত শাওনের বাড়িতে উপস্থিত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ গণতন্ত্র ফিরে আসবে, সুশাসন ফিরে আসবে। শাওনের মতো যাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে প্রতিটা হত্যার বিচার হবে এই বাংলাদেশের মাটিতে।
তিনি বলেন, শাওন দেশের জন্য গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে সে বিএনপির কর্মসূচিতে এসেছিল আর সেখানে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং এটা জনগণের পক্ষে দেশের পক্ষে গণতন্ত্রের পক্ষে। তার এই আত্মদান তার এই শহীদী আত্মদান দেশবাসী ভুলবে না। দল তার পরিবারের দায়িত্ব নেবে।
এদিকে গত বুধবার বিকেলে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে একটি মামলার বাদী সদর থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন। অপর মামলার বাদী পঞ্চসার ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সদস্য আব্দুল মালেক। ওই মামলায় নিহত শাওনকে (২৫) ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখ্য ও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবুল বাসার বলেন, মামলায় এ পর্যন্ত দুজন আসামি আটক আছে। এর চেয়ে বেশি এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। মামলাটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হবে।
নিহত শাওনকে কেন মামলার আসামি করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে আব্দুল মালেকের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের মুক্তারপুরের অফিস ভাঙচুর করায় ও আমার পোলাপানদের মারধর করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
যাদের আসামি করে মামলা করেছেন তারা কারা জানতে চাইলে বলেন, আমার কাছে তালিকা আছে। আপনি আমার সাথে এসে দেখা করেন। ফোনে বলা যাবে না।
মামলার বাদী আব্দুল মালেক তার অভিযোগপত্রে দাবি করেন, আসামিরা আওয়ামী শ্রমিক লীগের অফিস ভাঙচুর করে। এ সময় বাধা দিলে তার লোকজনকে মারধর করে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর পুরনো ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় আহত যুবদলকর্মী শাওন বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে।
নিহত শাওন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকার সোয়াব আলীর পুত্র। পেশায় ইজিবাইক চালক শাওনের আট মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে।