আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনো কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনকালীন সময়ে নতুন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে একটি স্বচ্ছ পার্লামেন্ট গঠন হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি পরিষ্কার- মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া, তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে যে সব মামলা, তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আর অবিলম্বে সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
একই সঙ্গে বলতে চাই আমরা যদি এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন করে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সবার আগে তরুণদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে, জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে, গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে।
শনিবার (১৫ অক্টৈাবর) বিকেল পৌনে ৫টায় ময়মনসিংহ নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ দেখিয়েছে, এখন ময়মনসিংহের মানুষ দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন করে। এদেশের মানুষ এখন জেগে উঠছে, জেগে উঠবে। ইনশাল্লাহ আপনাদের সবার সমবেত প্রচেষ্টায় এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব। এই হোক আমাদের আজকের শপথ।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেছেন, আজকে আমি যখন ময়মনসিংহে রওনা দিলাম। গাজীপুর পার হওয়ার পর মনে হলো হরতাল চলছে নাকি কারফিউ চলছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, ট্রাক নেই। কিছু ছোট ছোট ট্রাকে আমাদের কিছু নেতাকর্মীরা আসছে। এরপরে শুনলাম মাঝখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে নাকি ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, তারপর যখন কাছে পৌঁছলাম দেখলাম সোনার ছেলেরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের ছেলেরা তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আজকের সভা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ কোনো বাধা মানবে না। তারা অবশ্যই এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশকে আবার সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। আজকের এই সমাবেশে দেখছেন চেয়ারটা খালি আছে। এটা কার জন্য? দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য। তিনি এখন কারাবন্দী। তিনি আমাদের দলের প্রধান। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাকে এখন মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সেজন্য আমরা এই চেয়ারটা খালি রেখেছি আমাদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সম্মেলনে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পাঁচজন বীর সেনা ছাত্রদলের নূরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জ যুবদলের শাওন ও মুন্সিগঞ্জের শাওন, যশোরের আব্দুল আলিম তারা প্রাণ দিয়েছেন। রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, পুলিশের গুলির সামনে বুকে পেতে দিয়ে আওয়াজ তুলেছেন যে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে। আপনারা তাদের সম্মান দেখাতে চান, তাদের শ্রদ্ধা করতে চান, তাদের রক্তদানকে বৃথা যেতে দেবেন না বলে শপথ নিয়েছেন। ওই শপথে আজকে আমাদের অটুট থাকতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম।
এ সময় সমাবেশটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মামুদ আলম ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়মারম্যান ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, মশিউর রহমান।
এছাড়াও বক্তব্য দেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, শরীফুল আলম, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, মহিলাদল নেত্রী আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক জুয়েলসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।