শেখ ফজলুল হক মণির ৮৪তম জন্মদিন আজ (৪ ডিসেম্বর)। তিনি ছিলেন পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তিতুল্য ছাত্রনেতা। একাত্তরে ছাত্র-যুবকদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের অন্যতম প্রধান ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে মনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকালে বনানী কবরস্থানে যুবলীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। পরে বনানী কবরস্থানের গেটের সামনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ মনি সম্পর্কে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, শেখ মণির জন্মদিন আমার কাছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, রাজনৈতিকভাবেও তেমনি তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যক্তিগতভাবে আমার বাবা শেখ মণিকে আমি খুব কম পেয়েছি। মাত্র পাঁচ বছর। এরমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, সাংবাদিকতা, লেখালেখি, রাজনীতি, যুদ্ধবিধস্ত দেশগঠন সব মিলিয়ে বাবা ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাতেন। কিন্তু যতটুকু সময় পেয়েছি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি হিসেবে তা চিরভাস্বর।
শেখ মনির জ্ঞানচর্চার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলার বাণীতে বাবার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি দেখে অনুমান করা যায় যে, তিনি জ্ঞানচর্চা করতে ভালবাসতেন এবং একজন রুচিশীল পাঠক ছিলেন। বাংলার ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ তার পাঠাগার দেখলে বোঝা যায়। শেক্সপিয়ার, টলস্টয়সহ বিশ্বের বিখ্যাত লেখকদের সঙ্গে আমার বাবার লাইব্রেরির মাধ্যমেই প্রথম পরিচয়। বাবার লেখনী থেকে ধারণা করা যায়, বাবা বাংলাদেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রগতিশীল, বৈষম্যহীন, ও অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা সৃষ্টির বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন।
শেখ পরশ বলেন, বাবার যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়, তা হলো কর্ম ও মমত্ববোধ। তিনি আত্মকেন্দ্রিক রাজনীতিবিদ ছিলেন না। নেতাকর্মীদের প্রতি ছিল তার অপরিসীম মমত্ববোধ ও দরদ। একজন কর্মী মারা যাওয়ায় আমি বাবাকে শিশুর মতো কাঁদতে দেখেছি। দাদির কাছে শুনেছি নজরুল কাকা যখন পাকিস্তানিদের কাছে ধরা পরে শহীদ হলেন, বাবা শিশুর মতো কেঁদেছিলেন।
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে শেখ ফজলুল হক মণি রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে এবং পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এর আগে, ২৩ নভেম্বর জেনারেল উবানের নেতৃত্বে দেশের পূর্বাঞ্চলে শুরু হয় অপারেশন ঈগল। শেখ মণি বিএলএফের কয়েকজন সদস্য নিয়ে তাদের সঙ্গে অপারেশন ঈগলে যোগ দিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। জেনারেল উবানের বর্ণনায়, অদম্য সাহসের অধিকারী স্থিরপ্রতিজ্ঞ এই লোকটি (শেখ মনি) পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ ভূমিতে আসল যুদ্ধে সময় আমার সঙ্গে ছিলেন।
তিনি বলেন, শেখ মনি আমাদের কাছে বিশ্বস্ততারও প্রতীক। ১৫ আগস্টের প্রথম শহীদ হিসেবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে শেখ মণি আনুগত্য ও বীরত্বের যে উদাহরণ রেখে গেছেন, যা পাঁচ দশক পরও যুবসমাজের কাছে উদাহরণ হয়ে আছে। শেখ ফজলুল হক মণির অনুসারী এবং সংগঠনের কর্মী হিসেবে আমরাও গর্বের সঙ্গে বুক চাপিয়ে বলতে পারি, যুবলীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্য সর্বোচ্চ আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, শেখ মনি উপলব্ধি করতেন একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচারসম্পন্ন জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নাই। ঠিক একইভাবে শেখ মণির উত্তরসূরি হিসাবে আমরা আজকের যুবলীগ মনে করি, একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, উন্নয়নশীল ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
শেখ পরশ বলেন, মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতা কিন্তু সমাজনীতির অংশ। দুর্নীতিও সমাজনীতির অংশ। এগুলো যদি আমরা মোকাবিলা না করতে পারি, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা থেকেই যাবে। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ গত তিন বছর যে মানবিক সমাজব্যবস্থা গঠনের আন্দোলন করছে, তা সফল এবং সার্থক সমাজনীতি প্রতিষ্ঠার একটি বড় ধাপ। তাই এই বিজয়ের মাসে অঙ্গীকার করতে চাই যে, আমরা জনগণের পাশে থাকার এই মানবিক ও সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলসহ অন্য নেতাকর্মীরা।