৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও বিশ্বকাপ জিতেছে মেসির আর্জেন্টিনা। আর এরপরই আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েছে লাতিন আমেরিকান এই দেশটি। অন্যদিকে কাতার বিশ্বকাপের উত্তেজনাকর ফাইনালে পরাজয়ের পর ফ্রান্সে শুরু হয়েছে দাঙ্গা।
আর্জেন্টিনার কাছে হেরে যাওয়ার পর ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি শহরে এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নাটকীয় ৪-২ গোলে পেনাল্টি শুটআউটে আর্জেন্টিনা জয়লাভ করার পর ফ্রান্সে দাঙ্গা শুরু হয়েছে বলে নেক্সটা টিভি জানিয়েছে। মূলত বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে যাওয়ার পর ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি শহরে দাঙ্গা শুরু হয়।
নেক্সটা টিভি বলছে, কাতারে পেনাল্টিতে আর্জেন্টিনার কাছে ৪-২ গোলে হেরে যাওয়ার পর ফ্রান্সের হাজার হাজার ফুটবল ভক্ত প্যারিস, নিস এবং লিয়ন শহরের রাস্তায় নেমে আসেন।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি ভিডিওতে ফ্রান্সের রাস্তায় বিশাল হট্টগোল এবং বিশৃঙ্খলার দৃশ্য উঠে এসেছে। অবশ্য পুলিশ সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করার পরও উত্তেজনা চলছিল।
এছাড়া দাঙ্গার সময় পুলিশ অফিসারদের ওপর ঢিল ও আতশবাজি দিয়ে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটে। একজন টুইটার ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, ‘লিয়ন শহরে এক নারী দাঙ্গাবাজদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় তার ওপর আক্রমণ করা হয়।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপে পরাজয়ের জেরে বিশৃঙ্খলার পর প্যারিসের রাস্তায় সশস্ত্র পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। মেসিদের কাছে ফাইনাল ম্যাচে পরাজয়ের পর রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার ফুটবল ভক্ত।
অন্যদিকে আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সান রিপোর্ট করেছে, ফ্রান্সের রাজধানীতে বিখ্যাত চ্যাম্পস-এলিসিস-এ ফুটবল ভক্তদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা পুলিশ। কারণ উত্তেজনাপূর্ণ খেলায় পরাজয়ের পর ভক্তরা সেখানে আগুন জ্বালায় এবং আকাশের দিকে আতশবাজি নিক্ষেপ করে।
ইন্ডিয়া টুডে বলছে, বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী দাঙ্গার ভিডিও পোস্ট করেছেন। এসব ভিডিওতে প্যারিস ও লিয়নের রাস্তায় বিশৃঙ্খলার দৃশ্য এবং পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাসের শেল থেকে লোকদের পালিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।
এসব ভিডিওগুলোর মধ্যে একটিতে পুলিশকে দাঙ্গাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জল কামান ব্যবহারের আশ্রয় নিতে দেখা গেছে বলেও রিপোর্টে যোগ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, লিয়ন শহরে সহিংসতা শুরু হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ফুটবল ভক্তদের ওপর টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফ্রান্সজুড়ে প্রায় ১৪ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছিল বলে কর্মকর্তারা ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন।
বিশৃঙ্খলতার মধ্যেই ফরাসি পতাকায় সজ্জিত সমর্থকরা টিয়ার গ্যাস হামলার মুখোমুখি হওয়ার আগে পুলিশের দিকে ঢিল, বোতল এবং আতশবাজি নিক্ষেপ করে। খবরে বলা হয়েছে, দাঙ্গার পর শহরে কয়েক ডজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ফ্রান্সের বিপক্ষে রোববারের নাটকীয় বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা প্রথমার্ধে ২-০ তে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে দুই মিনিটে দুটি গোল হজম করে। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে মেসি গোল করলেও পরে পেনাল্টি কিক দিয়ে স্কোরে আবারও সমতা ফেরান এমবাপে।
শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে আর্জেন্টিনা। আর এর মাধ্যমে ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালের পর তৃতীয়বার বিশ্বকাপ ঘরে তুলল আর্জেন্টিনা।
রোববারের ফাইনালে আর্জেন্টিনার হয়ে দু’টি গোল করেন ৩৫ বছর বয়সী মেসি, অপরটি করেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। অন্যদিকে ২৩ বছর বয়সী কিলিয়ান এমবাপ্পে এদিন ফ্রান্সের একমাত্র স্কোরার হিসেবে তিনটি গোল করেন।