পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বৈঠকে বসছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য আমরা সংসদ সচিবালয়ের কাছে বৈঠকের সময় চেয়েছিলাম। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে। স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সবকিছু নির্ধারণ হবে। এক্ষেত্রে এক ফেব্রুয়ারি ছয় উপ-নির্বাচনের পর ভোটার তালিকা করা হবে।
সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সে মোতাবেক তার দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।
এদিকে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদটি শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিন থেকে ষাট দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে।
সংবিধানের এ সকল বিধানের আলোকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। আর ভোট গ্রহণ করতে হবে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
২০১৮ সালে সর্বশেষ এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ওই বছর ২৫ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় ছিল ১০ ফেব্রুয়ারি এবং ভোট গ্রহণের সময় রাখা হয়েছি ১৮ ফেব্রুয়ারি। সে সময় ২২ দিনের মধ্যে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে সে সময় বর্তমান রাষ্ট্রপতি একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সংবিধানে যা আছে-
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে ওই পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি পঁয়ত্রিশ বছরের কম বয়স্ক হন; অথবা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য না হন, অথবা কখনও এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হয়ে থাকেন।
অন্যদিকে ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।
আবার একাদিক্রমে হউক বা না হউক-দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। স্পিকারের উদ্দেশ্যে সাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতি তার কার্যভারকালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া যোগ্য হবেন না এবং কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতিরূপে তার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
নির্বাচন পদ্ধতি:
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘নির্বাচনী কর্তা’ হিসেবে এ নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এজন্য একটি জাতীয় সংসদ কক্ষে সংসদ সদস্যের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নির্বাচনী কর্তা সভাপতিত্ব করবেন।
সংসদের অধিবেশন চলাকালে নির্বাচনের প্রয়োজন হলে কমিশন ভোট গ্রহণের অন্যূন সাতদিন আগে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে। আর সংসদ অধিবেশন না থাকলে ভোট গ্রহণের দিনে স্পিকারের সঙ্গে অন্যূন্য সাতদিন আগে আলোচনা করে সংসদের বৈঠক সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা আহ্বান করবে।
রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনোনয়নপত্রে একজন সংসদ সদস্যের প্রস্তাবক ও একজন সংসদ সদস্যের সমর্থক হিসেবে সাক্ষর থাকতে হবে। এছাড়া যিনি মনোনীত হবেন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সম্মতিসূচক তারও একটি বিবৃতি থাকতে হবে। এ নির্বাচনে ভোটার হবেন সংসদ সদস্যরা। কমিশন একটি ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে।
বৈধ একাধিক প্রার্থী থাকলে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন শেষে একাধিক প্রার্থী থাকলে সংসদের বৈঠকে নির্ধারিত দিনে দুপুর ১২টার পর ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ যেমন প্রকাশ্যে হবে, তেমনি ভোট গণনাও প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ ভোট যদি একাধিক প্রার্থী পেয়ে যান, তবে তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করবেন। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণাই চূড়ান্ত।