বৈষম্যের কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ম্লান হয়ে যাচ্ছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, বৈষম্যের কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যের কারণে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারি দল না করলে চাকরি মেলে না, ব্যবসা করা যায় না। এমনকি, শোনা যাচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষক বদলি ও নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আমরা আইনের শাসন চাই। আমরা ন্যয় বিচার ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চাই। চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দুর্ণীতি ও দুঃসাশনে দেশের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষের সম্মান, সম্পদে ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। বৈষম্যের কারণে একটি অসম রাষ্ট্র তৈরী হচ্ছে। এমন একটি দেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। মানুষে- মানুষের বৈষম্য হচ্ছে স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থি।

আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয়ে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরিফা কাদের এমপির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, দেশের শিক্ষা ও চিকিৎসার মান ক্রমন্বয়ে কমে যাচ্ছে। এখন বিদ্যালয়গুলোতে বড় বড় ভবন হচ্ছে, আধুনিক ল্যাব হচ্ছে কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা নেই। যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। জিপিএ বাড়ছে, সার্টিফিকেট বাড়ছে কিন্তু সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থার অভাবে শিক্ষার মান বাড়ছে না। কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার পদক্ষেপ নেই। ফলে, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আবার, বেসরকারী পর্যায়ে উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী হচ্ছে, যেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয়না। তাই, বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে সন্তানের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, বড় বড় ভবনের সাথে হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু চিকিৎসা সেবার মান বাড়ছে না। অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপণ হচ্ছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে না। বেসরকারী পর্যায়ে আধুনিক সুবিধাদি সহ হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। সেখানে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাই, দেশের বেশির ভাগ মানুষ মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসা পাচ্ছে না। বৈষম্যের কারণে, দেশে শোষক ও শোষিত শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির পরিচয়। সংস্কৃতিকে ভিত্তি করেই জাতীয়তা ও রাষ্ট্র গঠন হয়। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছি। দিনে দিনে আমাদের নিজস্বতা বিলুপ্ত হচ্ছে। ভিনদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসণে আমাদের সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতি রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দৃশ্যমান হচ্ছে না। নিজস্ব সংস্কৃতি সংকুচিত হলে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে জাতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে দুর্ণীতি, দুঃশাসন, টাকা পাচার, সন্ত্রাস ও টেন্ডারবাজী উপহার দিয়েছে। দেশের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের কোন উপকার হচ্ছে না। শত কোটি টাকা ব্যায়ে পারমানবিক বিদ্যুত কেন্ত্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু এই টাকায় প্রতিটি উপজেলা স্পেশালাইজড হাসপাতাল তৈরী হলে দেশের মানুষ বেশি উপকৃত হতো। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা শেরিফা কাদের এমপি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে সাংস্কৃতিক পার্টির নেতা-কর্মীরা ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করবে। ইতিহাসের প্রতিটি বিপ্লব ও আন্দোলন-সংগ্রামে সাংস্কৃতিক কর্মীরা অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। তাই জাতির প্রতিটি প্রয়োজনে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির নেতা-কর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না। আমরা গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতেই রাজনীতি করছি।

জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরীফা কাদের এমপি’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু ও সাংস্কৃতিক পার্টির নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নুরুন্নাহার বেগম, খন্দকার দেলোয়ার জালালী, মোঃ হাবিবুল্লাহ ফকির, রাজিব কান্তি গুহ, জিএম রাজু, চম্পা মন্ডল, হিমেল, মোস্তফা জামান বাবু, ফয়েজ মুন্না, মাহমুদা আমির শিল্পী, পংকজ দাস,মনোয়ার-ই-খোদা চৌধুরী (মন্টি)।