পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য তিন জেলার দুর্গম এলাকার পাহাড়ী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়নে পার্বত্য অঞ্চলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরী শিক্ষাসহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ব্রীজ নির্মাণসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত রয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাক্রাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দুর্গম এলাকার দুই ইউনিয়নের ১১৫ সুবিধাভোগী পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সোলার হোম প্যানেল এর মাধ্যম্যে বিদ্যুৎ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এসব জনসেবা নিশ্চিত করতে সরকার পার্বত্য জেলাগুলোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে। পার্বত্য দুর্গম এলাকায় সৌর শক্তির আলোয় আলোকিত করার লক্ষ্যে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল বিতরণ করছে। পার্বত্য তিন জেলার দুর্গম পাহাড়ি ৪২ হাজার ৫০০ পরিবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সৌর বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা সে লক্ষ্যে এগুচ্ছি। অতীতের কোনো সরকার জনগণের উন্নয়নের জন্য কোনোপ্রকার আন্তরিক ছিল না। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রায় পৌণে ৩ শত বছর শাসনকালের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাত্র সাড়ে ২২ বছরের শাসনামলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সরকার মেয়েদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করেছে। মেয়েদের উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বেদে, হরিজনদের ভাতা নিশ্চিত করেছে। সরকার সম্পূর্ণ আন্তরিক হয়েই জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করছে। কিন্তু আগের কোনো সরকারই সারাদেশে তথা পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেনি। হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহিন ঝুরি হিসেবে আখ্যা করেছিলেন, তিনি বুঝতেই পারেননি তার এ মন্তব্য যে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ হবে একদিন। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে অনুসরণ করার জন্য উন্নত দেশগুলোও এখন তাদের নিজেদেরকে বলছে।’
পার্বত্য রিমোট অঞ্চলে বাইরের লোক এসে রাতের বেলায় জোনাকির মতো আলো ঘরে ঘরে জ্বলছে দেখে অবাক হচ্ছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বসবাসরত ৪০ হাজার অনগ্রসর দরিদ্র পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। আজ থেকে ১১৫ পরিবারের ঘরে সৌর বিদ্যুতের আলো পাবে। পার্বত্য ছেলে মেয়েরা যাতে আলো, বাতাস পায় সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর।’
সোলার প্যানেল বিদ্যুৎ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর জন্য কাউকে কোনো টাকা পয়সা না দেওয়ার জন্য বলেন মন্ত্রী। এ সময় আগামিতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা চান পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের সর্বত্র বিদ্যুত সেবা নিশ্চিত করতে আরো এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ বিদ্যুতায়ন প্রকল্প বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে। এই সোলার প্যানেল সঠিকভাবে ব্যবহার করলে অন্তত ২০ বছর পর্যন্ত প্রত্যেকটি পরিবার বিনামূল্যে বিদ্যুতের আলো, ফ্যান ও মোবাইল চার্জারের সুবিধা পাবেন। উপকারভোগীদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে সোলার প্যানেলের ব্যবহারবিধি জানার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী প্রত্যেককে নগদ আরো ৬৫০ টাকা করে দেওয়া হবে ‘
মন্ত্রী বীর বাহাদুর ওয়াগগা সোলার প্যানেল হোম সিস্টেম বিতরণ শেষে নানিয়ারচর উপজেলাধীন ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন বাজার এলাকা হতে নিচ পাড়া পর্যবন্ত পাকা রাস্তার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এবং পরে সুরিদাশপাড়ায় বগাছড়ি ১ নং সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের ইক্ষু বাগান পরিদর্শন করেন। ইক্ষু বাগানে ৩৯০টি বাগান সৃজন করা হয়েছে। একেকটি বাগান ৩৩ শতক ভূমির উপর তৈরি করা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার সভাপতিত্বে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরী (বিএমটিএফ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রোসায়দুল মাওলা, বিএমটিএফ এর জিএম লে. কর্ণেল বজলুর রহমান হায়াতী, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য-প্রশাসন ইফতেখার আহমেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য-বাস্তবায়ন ও প্রকল্প পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।