ইউক্রেনে চলমান রুশ আগ্রাসনের কারণে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ জোটের বেশিরভাগ সদস্য রাশিয়ার তীব্র নিন্দা করেছে। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জোটের সদস্য দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের অংশগ্রহণে ভারতে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে এই নিন্দা জানানো হয়।
তবে সেখানে মস্কোর নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে নীরব ছিল চীন। এছাড়া বৈঠক শেষে শুধুমাত্র চীন এবং রাশিয়া জোটের যৌথ একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতেও অস্বীকৃতি জানায়। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ভারত বর্তমানে জি-২০ জোটের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে এবং শনিবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। রয়টার্স বলছে, জি-২০ জোটের বৈঠকে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি উত্থাপন করতে চায়নি। তবে পশ্চিমা দেশগুলো জোর দিয়ে জানায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা অন্তর্ভুক্ত না থাকলে বৈঠকের কোনও ফলাফলকেই তারা সমর্থন করবে না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, চীন ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা করতে অস্বীকার করার পরে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা ভারতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পর সমাপনী বিবৃতিতে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে।
মূলত বেইজিং জি-২০ জোটের বিবৃতির এমন কিছু অংশ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে যেখানে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করা হয়েছে। অন্যদিকে মস্কো বলেছে, ‘রুশ-বিরোধী’ পশ্চিমা দেশগুলো জি-২০ জোটকে ‘অস্থিতিশীল’ করছে।
জোটের বিবৃতিতে সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত, আর্থিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি এবং অব্যাহত জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘বেশিরভাগ সদস্য ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করেছে এবং জোর দিয়ে বলেছে, এই যুদ্ধ ব্যাপক মানবিক দুর্ভোগের কারণ হয়েছে ও বিশ্ব অর্থনীতির বিদ্যমান সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।’
সংবাদমাধ্যম বলছে, সাতটি প্রধান শিল্পোন্নত দেশ গত শুক্রবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। ঠিক সেসময় রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জি-২০ গ্রুপের আলোচনা অনেকটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন রাশিয়ান কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে একই অধিবেশনে ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বেআইনি এবং অন্যায় যুদ্ধের’ নিন্দার পাশাপাশি ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য এবং মস্কোর যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে বাধা দেয়ার জন্য জি-২০ দেশগুলোকে আরও কিছু করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে শেষ শীর্ষ জি-২০ বৈঠকে নেতারা ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, এই সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতির সংকটকে আরও তীব্র করছে। এই গোষ্ঠীতে রাশিয়া এবং চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোও রয়েছে যাদের মস্কোর সঙ্গে বিপুল বাণিজ্যিক যোগাযোগ রয়েছে।
ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সাংবাদিকদের বলেছেন, বেঙ্গালুরু বৈঠকের জন্য প্রস্তুত করা বিবৃতিতে বালি ঘোষণার দু’টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। তবে রাশিয়া এবং চীন সেগুলো সরিয়ে ফেলার দাবি করে জানায়- তারা এবার ওই চূড়ান্ত নথি বা বিবৃতির অংশ হবে না।