সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। তারই অংশ হিসেবে আজ শনিবার (৪ মার্চ) রাজধানীর ৫০ থানায় একযোগে পদযাত্রা করতে যাচ্ছে বিএনপি।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকার পতনের একদফা দাবি ঘোষণার আগে এটা হবে বড় শক্তি প্রদর্শন। এই পদযাত্রার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে, দাবি আদায় না হলেই আসবে দেশব্যাপী একযোগে সরকার পতন কর্মসূচি।
দলীয় সূত্র জানায়, চাল, ডাল, তেল, আটা, লবন, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানির দাম দফায় দফায় বাড়ানোর প্রতিবাদে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বাস্তবায়ন ও নেতাকর্মীদের হত্যাসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার (৪ মার্চ) দেশের সবকটি মহানগরের থানায় থানায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির অধীনে ২৬টি ও দক্ষিণ বিএনপির অধীনে ২৪টি থানায় আজ (৪ মার্চ) পদযাত্রা কর্মসূচি হবে। সব থানার কর্মসূচি শুরু হবে দুপুর ২টায়।
ইতোমধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় সব সিনিয়র নেতাকে স্পট ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি থানার কর্মসূচিতে সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থেকে পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম। শুধু সরকার দলীয় লোকদের পকেট ভারী করতেই গত কয়েক মাসেই কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। কুইক রেন্টালের ভর্তুকির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এমনিতেই দ্রব্য মূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থা। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে এখন সব জিনিসের দাম আরও বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাই মুশকিল হবে। নিশিরাতের ভোটের সরকারের দুর্নীতির কারণে দেশ এখন ধ্বংসের শেষপ্রান্তে। বর্তমানে মানুষের ভোটের অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই, নেই ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার।
মির্জা ফখরুল বলেন, হত্যা, গুম, খুন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে নিপীড়ন চালিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত জনগণ। নির্দলীয় সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, জনগণ হতে দেবে না।
আজ (৪ মার্চ) দেশের সব মহানগরের থানায় থানায় পদযাত্রা সফল করার জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ জনগণের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
জানা গেছে, আজ (৪ মার্চ) উত্তরা-পূর্ব থানার হাউজ বিল্ডিং এলাকার কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যান্য থানার পদযাত্রা কর্মসূচিতেও বিএনপির সিনিয়র নেতারা অংশ নেবেন। এর মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যাত্রাবাড়ীর কাজলা, মির্জা আব্বাস শাহবাগ থানার প্রেসক্লাব এলাকায়, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বংশাল থানার নয়াবাজার, ড. আব্দুল মঈন খান পল্লবী থানা, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমদ গুলশান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী শাহজাহানপুর থানার খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় থাকবেন।
বিএনপি এর আগে ইউনিয়ন, জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে পদযাত্রা করে। সর্বশেষ ২৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের সব জেলায় একযোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা করে বিএনপি। এতে অন্তত ৪০টি জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মসূচিতে হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি।
এদিকে, আজ (৪ মার্চ) সাংগঠনিক ১০টি মহানগরের প্রতিটি থানায় পদযাত্রা কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সমমনাদের কর্মসূচি
এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি জানান, পদযাত্রা কর্মসূচিতে রাজধানীর ৫০ থানার প্রতিটি স্পটে দলের সিনিয়র নেতারা নেতৃত্ব দেবেন। এছাড়া বিএনপির সঙ্গে যেসব সমমনা দল যুগপৎভাবে আন্দোলন করছে, তারাও আলাদা স্পটে পদযাত্রা করবে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে থেকে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে, এলডিপি কারওয়ানবাজার এফডিসি সংলগ্ন নিজস্ব অফিসের সামনে থেকে, গণফোরাম নটরডেম কলেজের সামনে থেকে ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে পদযাত্রা করবে।