গণহত্যা দিবসের রাতে ১ মিনিট ‘ব্ল্যাকআউট’: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে সারাদেশে এক মিনিটের জন্য ব্ল্যাকআউট পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

সোমবার (৬ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে এক মিনিটের জন্য সব ধরনের আলো বন্ধ হয়ে যাবে। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে এই ব্ল্যাকআউট থাকবে।

তিনি বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ২৬ মার্চ সাভারে যাবেন। বিদেশি কূটনীতিকরাও সেখানে যাবেন। তাদের এই যাওয়ার পথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাতে সমুন্নত থাকে, তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেখানে যা প্রয়োজন, রাস্তাঘাট ব্যবস্থা সুন্দর করা, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বৃদ্ধি করা; এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার করে যারা গুজব ছড়াবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এসময় জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনও নাশকতা ছিল কি না; তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন নিয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি কোনও নাশকতা বা ষড়যন্ত্র কি না, সেটি আমরা দেখছি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তারা সিলিন্ডারে রান্নাবান্না করেন। সেখানে পাশেই আমাদের সাতটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট আছে। অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আগুন লাগলে নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। ঘটনাটি সে রকমই ঘটেছে। তবে কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা আমরা তদন্ত করছি। তাতে যদি কোনও নাশকতা, ষড়যন্ত্র কিংবা অন্য ধরনের কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়, সেগুলো আমরা দেখবো। সে নিয়ে আমরা কাজ করছি।

মন্ত্রী বলেন, যারা গৃহহারা হয়েছেন, তাদের জন্য আপাতত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা ভাসানচরে বিশাল একটি ব্যবস্থা রেখেছি, যারা স্বেচ্ছায় যেতে চান, তাদের সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসায় হামলা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আহমদনগর এলাকায় কয়েক হাজার কাদিয়ানী ও আহমদীয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। প্রতিবারই তারা দুদিনব্যাপী একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে। এবারও সেই অনুষ্ঠান করতে যাওয়ায় তাদের ওপর জামায়াতে ইসলামীর অ্যাকটিভিস্ট ও বিএনপি নেতারা একসঙ্গে জড়িত হয়ে তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তাদের ঘরবাড়িতে আগুন ধরায়। যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছিল, সেখানেও আগুন ধরায়। এতে একজন কাদিয়ানী সদস্য মারা যায়। মারামারি করতে গিয়ে একজন জামায়াতের সদস্যও আহত হয়ে মারা যায়।

এ নিয়ে সাতটি মামলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা ফজলে রাব্বি আছেন। তিনি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে সমাবেশটি বন্ধ করতে এসেছিলেন। ঘটনাগুলোর নেপথ্যে তিনিও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, সেখানে র‌্যাবের এক সদস্যও আহত হয়েছেন। তার মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছে। র‌্যাবের একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বেশ ধৈর্যের সঙ্গে সেটি মোকাবিলা করেছে। সেখানকার পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। যারাই মামলা দিচ্ছে, মামলা নেওয়া হচ্ছে।

বিএনপিকে দমন করতেই পঞ্চগড়ের ঘটনা সরকার ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধী দলের। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি তো জনগণের কাছেই এই প্রশ্নটি রাখবো যে আওয়ামী লীগ কোনও সময় এমন কোনও ঘটনা ঘটিয়েছে কি না। ২০১৪-১৫ সালে গাড়ি, মানুষ পোড়ানোর ঘটনা আপনারা দেখেছেন। তারা আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণ নিয়েই তারা চলে। জনগণের বিপক্ষে কোনোদিন আওয়ামী লীগ যায় না। আর আওয়ামী লীগ যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে, সেখানে এমন কোনও ঘটনা তারা কেন ঘটাবে? যারা যারা ঘটিয়েছে, তারা আড়ালে চলে যেতে বিভ্রান্তিকর খবর আপনাদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে।

২৫ মার্চ ইতিহাসের এক বর্বরোচিত গণহত্যার ক্ষণ। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো দিবসটি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়ে থাকেন।