কোনো কারণ দর্শানো (শো-কজ) ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মচারীকে অপসারণ করা সংক্রান্ত ৫৪(২) বিধি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। এতে করে কমিশনের শো-কজ ছাড়াই কর্মী অপসারণের বিধি বহাল থাকলো।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগ রায় দেন।
বিধি বহাল থাকায় দুদকের চাকরি ফেরত পাবেন না আহসান আলী ও শরীফ উদ্দিন নামে দুই কর্মকর্তা।
আদালতে দুদকের সাবেক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহউদ্দিন দোলন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
২০০৮ সালের দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) বিধিতে বলা হয়েছে, এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দর্শিয়ে কোনো কর্মচারীকে নব্বই দিনের নোটিশ দিয়ে বা এসব দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করতে পারবে।
শরীফের আইনজীবী সালাহউদ্দিন বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়া এভাবে কর্মচারী অপসারণ সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩১ ও ১৩৫ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। তাই এটা থাকতে পারে না। হাইকোর্ট এটা বাতিল করেছিলেন। পরে দুদক লিভ টু আপিলের পর আপিল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছিলেন। এরপর রিভিউ করে আপিলের সুযোগ পায় দুদক।
২০০৮ সালের দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) বিধি অনুসারে মো. আহসান আলী নামের দুদকের এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। তিনি ৫৪ (২) বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন। সে রিটে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর এ বিধি বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে, যা ২০১৬ সালের নভেম্বরে খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এর বিরুদ্ধে পরের বছর দুদক পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে। পরে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর দুদককে আপিল করার অনুমতি দেন। আর এই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। পরে দুদক আপিল করে।
এদিকে দুদকের উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিনকে গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি অপসারণ করলে তিনিও দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধি ও চাকরিচ্যুতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। পরে ১১ এপ্রিল তা শুনানির জন্য ওঠে। কিন্তু তখন পর্যন্ত মো. আহসান আলীর মামলায় দুদকের রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় শরীফের রিটের শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে এ মুলতবি আদেশের বিরুদ্ধে গত বছর ১৬ জুন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন শরীফ।
পরে গত ৩ জানুয়ারি শরীফের সেই লিভ টু আপিল ও দুদকের আপিল শুনানির জন্য একসঙ্গে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠে। এরপর একসঙ্গে দুই আবেদনের শুনানি শেষে গত ২ মার্চ রায়ের জন্য ১৬ মার্চ দিন ঠিক আপিল বিভাগ।