বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডিতে প্রতিদিন তৃণমূলের শত শত নেতা-কর্মী আসেন। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা নেতা কর্মিদের মেলবন্ধন তৈরি হয় সেখানে।বিভিন্ন কাজে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেমন নেতাকর্মী আসেন এখানে, তেমনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরাও আসেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘিরে থাকা কিছু সিন্ডিকেটের কারনে অনেক সময় তাদের সাথে দেখা করতে পারেনা তৃণমূলের নেতা কর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রিয় নেতার সাথে কথা বলতে বা কাছে গিয়ে একটা ছবি তুলতেও তাদের অনুমতি নিতে হয় ও দেন-দরবার করতে হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনও হয়। নেতাকর্মীরা এ সিন্ডিকেটের নাম দিয়েছে ‘কুচকাওয়াজ পার্টি’। এই পার্টির কার্যক্রমে বিরক্ত তৃণমূলে ও সাবেক নেতাকর্মীরা।
গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ধানমন্ডির পার্টি অফিসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে ঘেঁষায় এক নেতাকে মারধরের পর বিষয়টি আবারো সামনে এসেছে। এ নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী এক নেতা। এ ঘটনার ভিডিও এরই মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ধানমন্ডির পার্টি অফিসের সামনে অভিযুক্তের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে নেতাকর্মীরা।লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযুক্তকে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসতে নিষেধ করেছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যখন পার্টি অফিস থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন তাকে প্রটোকল দিতে অনেকেই তার পেছন পেছন আসছিলেন। সেখানে ওবায়দুল কাদেরের ঠিক পেছনে থাকা শহিদুল্লাহ রাজিবের সাথে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেল খারাপ আচরণ করে। একইসাথে জাফরুল ইসলাম নাহিদকেও ঘুষি মারেন। ওবায়দুল কাদের সেখানে থাকায় এ নিয়ে ভুক্তভোগী কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে এ ঘটনার বিচার চেয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘিরে থাকা নির্দিষ্ট সেলফি সিন্ডিকেটের কারণে কাছে ঘেষতে পারেন না তারা। নেতার সাথে কথা বলতে বা কাছে গিয়ে একটা ছবি তুলতেও তাদের অনুমতি নিতে হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনও হয় বলে অভিযোগ আছে। নেতাকর্মীরা এ সিন্ডিকেটের নাম দিয়েছে ‘কুচকাওয়াজ পার্টি’। এই পার্টিতে বিরক্ত নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী জাফরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমি ধানমন্ডি আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। দেখা করার শেষে স্যারের সঙ্গে বের হচ্ছিলাম। পেছন থেকে আমাকে টেনে ধরেন মাহমুদুল আসাদ রাসেল। এক পর্যায়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করেন ও সরে যেতে বলেন। পরবর্তী ওবায়দুল কাদের স্যার চলে যাওয়া পরে আমাকে রাসেল বলেন তোকে সরে যেতে বললাম, কেনো সরে গেলি না, তোর জন্য আমি ছবি তুলতে পারি নাই। এই বলে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে আরও বেশি মারতে থাকেন। পরে সেখান থেকে চুপচাপ থেকে চলে যাই। পরবর্তীতে এই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বরাবর ধানমন্ডি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
লিখিত অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে, বিনীত নিবেদন এই যে, আমি জাফরুল ইসলাম নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক,চরফকিরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, গত ২৫/০৩/২০২৩ খ্রি. তারিখে আনুমানিক সন্ধ্যা ৭.৩০ ঘটিকায় ৩/এ ধানমন্ডি সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে মাননীয় মন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদের এমপি মহোদয়ের সাথে দেখা করার জন্য দলের একজন কর্মী হিসেবে অন্যদের সাথে আমিও উপস্থিত ছিলাম। শুধুমাত্র সেলফি বাণিজ্য, সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল ও সমাজের সাধারণ মানুষকে দেখানোর লক্ষ্যে উপস্থিত মাহমুদুল আসাদ রাসেল (প্রকাশ: কাইল্লা রাসেল) নিজের কাঙ্খিত সেলফি ও ছবি তুলতে না পারায় অহেতুক আমাকে শারীরিকভাবে ধাক্কা ও ঘুসি মারেন। যার ফলে আমার শরীরের পরিহিত কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং আমাকে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। আমার সহপাঠী লোকমানকে ধাক্কা এবং কিলঘুসি মারে। যার ফলে সে আহত হয়। এছাড়া পাশে উপস্থিত মোঃ শহিদুল্লাহ রাজিবকে কিছু লোকজন নিয়ে এলোপাতাড়িভাবে সজরে ধাক্কা ও কিলঘুসি মারতে থাকে। উক্ত আঘাতের ফলে রাজিব মারাত্মকভাবে আহত হয়। এরপর পার্টি অফিসের মূল গেটের বাইরেও আমাদের এলাকার কয়েকজন। নেতাকর্মীকে হামলা করে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দলীয় নেতাকর্মীদের সে বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত, হয়রানি ও শারীরিকভাবে আঘাত করে। যার ফলে অনেক দলীয় নেতাকর্মী নিরাপদ মনে না করে পার্টি অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। গত কিছুদিন আগে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তানভীরের সাথে কাইল্লা রাসেল একই ঘটনা ঘটিয়ে তাকেও মারাত্মকভাবে আহত করে। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় খুবই কাছে থাকার অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি। সে ছবি দেখিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে নেতাকর্মীদের সাথে দেখা করিয়ে দেবে বলে অনেক টাকা আত্মসাৎ করে। দলের একজন কর্মী হয়ে সেলফিবাজ রাসেল ও ওরফে কাইল্লা রাসেলেট এহেন ঔদ্ধতপূর্ণ অসৌজন্যমূলক আচরণ পার্টি অফিসের সিসি টিভিতে দৃশ্যমান। সুষ্ঠু প্রতিকার ও বিচার প্রার্থনা করছি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শহিদুল্লাহ রাজিব বলেন, রাসেল প্রতিদিন কাদের স্যারের সাথে ওবায়দুল কাদের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে। সেসব ছবি দেখিয়ে এলাকায় মানুষকে এই কাজ সেই কাজ, তদবির করিয়ে দেয়ার নামে টাকা পয়সা নেয়। এটাই তার ব্যবসা। ওইদিন ছবি তুলতে না পেরে আমাদের ওপর আক্রমন করেছে। তারা ২০-২৫ জনের একটা সিন্ডিকেট আছে, যাদের জন্য কাদের স্যারের কাছে কেউ যেতে পারে না।
তিনি বলেন, এ ঘটনা পুরো সিসি টিভি ফুটেজ পার্টি অফিসে আছে। আমরা তার বিচার দাবি করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তাকে এখনই না থামাতে পারলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে এবং নেতাকর্মীরা নাজেহাল হবে।
জানতে চাইলে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগন থানা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, রাসেল বিভিন্ন মানুষজনের কাছ থেকে কাদের স্যারের সাথে দেখা করিয়ে দেয়া, তদবির করে দেয়া, ছবি তুলে টাকা নেয়, পদ পদবি দেয়ার কথা বলে টাকা পয়সা নেয়। সে নিজেও প্রতিদিন ছবি তুলে কাদের স্যারের কাছের লোক বলে পরিচয় দেয়। এসব করে সে বিভিন্ন ধান্ধা-ফিকির করে। ওইদিন সে একটু পেছনে থাকায় আর ছবি তুলতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করে।
এ সম্পর্কে অভিযুক্ত রাসেল অভিযোগ ভিত্তিহীন জানিয়ে বলেন, আমি কাউকে মারধর করিনি। আমার নামে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে এটা মিথ্যা অভিযোগ।