প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মামলার পর আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। তবে এটি কোন মামলা, কীসের মামলা সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি— বলেন মন্ত্রী।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর অনলাইনে করা একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। প্রতিবেদনটি করেছিলেন সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান। বাসা থেকে তুলে নেওয়ার সঙ্গে তার ওই প্রতিবেদনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
প্রথম আলোতে যে ছবি বা সংবাদ ছাপানো হয়েছে সেটা নিয়ে রাষ্ট্র বা সরকার যদি আপত্তি প্রকাশ করে তাহলে এর একটি আইনি প্রক্রিয়া আছে। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারিক ব্যবস্থার সুযোগ আছে। অথচ রাতের অন্ধকারে প্রথম আলোর সেই সাংবাদিককে সিআইডির কর্তমর্তারা তুলে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন— জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইন কিন্তু নিজস্ব গতিতে চলে। রাষ্ট্র ও আপনারা সকলেই আইন অনুযায়ী চলেন। কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে বিচার চান বা সংক্ষুব্ধ হয়ে থানায় মামলা করেন, সে অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে।’
‘আমি যতটুকু জানি একটি মামলা রুজু হয়েছে। সেজন্যই সিআইডি…. আমি সম্পূর্ণভাবে সঠিক উত্তর দিতে পারছি না। কারণ, আমার কাছে সব রিপোর্ট আসেনি। আপনারা যে প্রশ্ন করছেন, আমিও বিভিন্নভাবে অবগত হয়েছি।’
তিনি বলেন, এই মামলাকে কেন্দ্র করে খুব সম্ভব কোনো একটা ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে আমি এখনও পরিষ্কার নই। আমি পরিষ্কার হয়ে আপনাদের জানাতে পারব।
শামসুজ্জামানের করা প্রতিবেদনটি সঠিক ছিল না বলেও দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর সাংবাদিক সাহেব যে নিউজটি করেছেন সেটা সঠিক ছিল না। যেটা একাত্তর টিভির মাধ্যমে আপনারাই প্রকাশ করেছেন। সংবাদটা যে ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাপানো হয়েছে, একাত্তর টিভির মাধ্যমে সেটা স্পষ্ট হয়েছে।’
‘স্বাধীনতা দিবসে আমরা এত দূর এগোনোর পর এ ধরনের একটা ভুয়া নিউজ যদি কেউ দেয় তাহলে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। আপনিও হতে পারেন। নিউজটা আপনাদের কাছেও নিশ্চয়ই ভালো লাগেনি।’
‘রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। সে কারণে শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়া হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্রের আপত্তি নয়। আমি তো বলছি যে, একটি মামলা হয়েছে। তবে, সমস্ত সংবাদ এখনও আমার কাছে আসেনি। আমার কাছে যে টুকরো টুকরো সংবাদ আসছে, সেটার ভিত্তিতে আমি আপনাদের বলেছি। সব বিষয়ে সুনিশ্চিতভাবে বলতে হলে আমাকে আরও একটু সময় দিতে হবে। আমাকে সব বিষয়ে জেনে বলতে হবে।’
বুধবার ভোর ৪টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পরিচয়ে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তার সাভারের আশুলিয়ার ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পরিচয়ে সাভারের আশুলিয়ার ভাড়া বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ভোর ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে মোট ১৬ জন ব্যক্তি শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। তাদের মধ্যে ৭-৮ জন বাসার ভেতরে ঢোকেন। বাসায় ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করার পর শামসুজ্জামানকে নিয়ে তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান।
তারা আরও জানান, বটতলার নুরজাহান হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, শামসুজ্জামানসহ মোট ১৯ জন ব্যক্তি সাহরি করেন। ভোর পৌনে ৫টার দিকে বটতলা থেকে তারা আবার শামসুজ্জামানের বাসায় যান।
সেখানে উপস্থিত একাধিক গণমাধ্যমকর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শামসুজ্জামান ভাইকে দেখতে পেয়ে তার সাথে কথা বলতে চাই। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আমাদের একপাশে নিয়ে অন্যদিকে যেতে অনুরোধ করেন। এছাড়া শামসুজ্জামান পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার বলেও জানান তিনি।
শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার সময় তার বাসায় ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাসায় এসে তারা জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আবার তারা বের হয়ে যান। বাসা তল্লাশির সময় দুবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন উপস্থিত ছিলেন।