ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত ইসলামি পন্ডিত, ভাষাবিদ ইসলামি কবি এবং সাহিত্যিক আল্লামা আব্দুর রহমান কাশগরি র. এর মৃত্যু বার্ষিকী আজ।
১৯১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তুর্কিস্তানের বর্তমান রাশিয়ার কাশগর নগরে তাঁর জন্ম হয়েছিল। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সামন্ত শাসক।কমিউনিস্টরা যখন বিপ্লবের নামে সে দেশে গণহত্যা নির্যাতন শুরু করে আত্মরক্ষার জন্য তখন দলে দলে মানুষ দেশত্যাগ করে থকন তিনি তাঁর মাকে সহ একটি কাফেলার সাথে তিনি হিন্দুস্তানে রওয়ানা করেন এবং পথিমধ্যে তিনি তাঁর মাকে হারিয়ে ফেলেন।
হিন্দুস্তানে পৌঁছে লখনৌর নদওয়াতুল উলামা এতিমখানায় আশ্রয় হয় আব্দুর রহমান কাশগরীর। দারুল উলুম নদওয়াতুল ওলামা থেকে তিনি ১৯৩১ সালে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে সর্বোচ্চ ডিগ্রিতে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন এবং নদওয়াতুল উলামাতেই তিনি আরবি সাহিত্যের শিক্ষক পদে নিয়োজিত হন।
শেরেবাংলা একে ফজলুল হক বাংলার শিক্ষামন্ত্রী হলে ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একবার এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে নদ ওয়াতুল উলামায় যান এবং সেখানে আল্লামা কাশগরীর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়।কাশগরীর অসাধারণ পাণ্ডিত্যে তিনি মুগ্ধ হন। তখন শেরেবাংলা একে ফজলুল হক আল্লামা কাশগরীকে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারের উদ্দেশ্যে কলকাতা মাদ্রাসা-ই-আলিয়ায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্য অনুরোধ করলে আল্লামা কাশগরী রাজি হন। এবং উসুলে ফিকহের অধ্যাপক পদে যোগদান করেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগ হলে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়,তখন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে লাই- ব্রেরির বইপত্র তদারকি করার জন্য নিযুক্ত করেন। আল্লামা কাশগরী (রহ) কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং লাইব্রেরী তদারকি করেন।এখানে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পর ১৯৫৬ সালে তিনি সহকারী হেড মাওলানা পদে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে আল্লামা কাশগরী রহ. ১৯৬৯ সালে হেড মাওলানা পদে উন্নীত হন।
আল্লামা কাশগরী আরবি সাহিত্যের একজন নামকরা লেখক ছিলেন। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ আজ-জাহরাত কায়রোর একটি বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত অনেক গ্রন্থ মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। কিতাবুল হাদিকা, কিতাবুল মুফীদ,আল ইবরাত,আযযাহরাত আশ শাযারাত, মুহিককুননাকদ, আল মাহবাব ফিল মুযাককার ইত্যাদি। তাঁর রচিত অনেক বই দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার পাঠ্য ছিল। তিনি ’আল মুফিদ’ নামে একটি অভিধানও সংকলন করেছিলেন।
চিরকুমার এবং চিরদুঃখী এই মহান মানুষটার আপন বলতে কেউ ছিলনা। হোস্টেলের ছেলেগুলোকেই তিনি আপন মনে করতেন। ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকা শহরেই ইন্তেকাল করেছেন। আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লামা আবদুর রহমান কাশগরী র. ঢাকা আলিয়াতেই কর্মরত ছিলেন।তাঁর নামানু- সারে ঢাকা আলিয়ার আবাসিক ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়।