মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) চেয়ারম্যান হিসেবে পদাধিকার বলে নিয়োগের আইন কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২২ মে) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
মঙ্গলবার (২৩ মে) ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বগুড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা নবাব আলীর দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এ রুল জারি করেন। একইসঙ্গে আদালত মুক্তিযোদ্ধা নবাব আলীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে জামুকার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। তাকে বেতন ভাতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইন সচিব, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
পরে ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ২০২২ সালের আইন দ্বারা গঠিত একটি পৃথক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এ আইনের ৫(১)(ক) ও ৫(১)(খ) ধারা অনুসারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব পদাধিকার বলে যথাক্রমে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মন্ত্রণালয়ে যদি প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকেন, সেক্ষেত্রে তারা পদাধিকার বলে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, জামুকা আইন ২০২২ এর ৬ ধারা অনুসারে জামুকার অন্যতম প্রধান কাজ হলো– গেজেটভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় মর্মে তদন্তে এলে তার গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে ‘সুপারিশ’ করা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং সচিব একইসঙ্গে জামুকার সর্বোচ্চ পদে আসীন, ফলে তারা জামুকার নির্বাহী প্রধান হিসেবে যে সুপারিশ প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব হিসেবে সেটাই ‘মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত’ হিসেবে প্রকাশ করেন। তাছাড়া জামুকা যখন একজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে সুপারিশ করে মন্ত্রণালয় কিন্তু গেজেট বাতিলের আগে তাকে কোনো ধরনের অভিযোগ খণ্ডানোর বা শুনানির সুযোগও দেয় না; শুধু জামুকার সুপারিশ মোতাবেক গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। জামুকা আইনের ৮ ধারা অনুসারে জামুকার চেয়ারম্যান অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জামুকার সব নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী; অন্যদিকে মন্ত্রণালয়েরও প্রধান তিনি। সে কারণে প্রকৃত অর্থে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তকারী এবং বিচারক একই ব্যক্তি। এটা প্রতিষ্ঠিত ন্যায়বিচার নীতির পরিপন্থি। ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি, মর্যাদা ও সম্মানী মন্ত্রীর একক ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মন্ত্রী ও সচিবকে বাদ দিয়ে জামুকার বাকি সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান রাখা জরুরি।