তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মার্কিন ভিসা নীতি বিএনপির জন্যই বড় চাপ তৈরি করেছে। কারণ এই ভিসা নীতির কারণে এখন আর নির্বাচন প্রতিহত করবো, সেটি বলার সুযোগ বিএনপির নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তারা বলেছে যে- তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক সেটিই তারা চায়। অর্থাৎ বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তাদের সমর্থন পায়নি, বিশ্বব্যাপী কারো সমর্থন পায়নি। সুতরাং বিএনপির অন্তত আন্তর্জাতিক অঙ্গণে এটি নিয়ে আর বলার সুযোগ নেই । ফলে এই ভিসা নীতি তাদের ওপর বিরাট চাপ তৈরি করেছে।’
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ড. হাছান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা করার সময় যে প্রেস ব্রিফিং করা হয় সেখানে তারা বলেছেন যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে স্বচ্ছ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চাচ্ছেন সেটির জন্য সহায়ক হিসেবে তারা এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসা নীতিতে যেটা বলেছে, এটি সরকারি দল, বিরোধী দল সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেউ যদি নির্বাচনে বাধা দেয় এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। নির্বাচন বর্জন করার অর্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা। আর নির্বাচন প্রতিহত করার অর্থ সংঘাত তৈরি করা। এগুলো তো আর বিএনপি করতে পারবে না। সব মিলিয়ে এটি বিএনপির ওপর বড় চাপ তৈরি করেছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচনকালে বা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই তো বিএনপি নানা ধরণের কর্মসূচি দেয় এবং তাদের উদ্দেশ্যেও সেটি করা। আমি মনে করি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে এটার প্রেক্ষিতে তাদের সেগুলো করার সুযোগটা অনেক কমে গেছে। তাদেরকে নির্বাচনে আসতে হবে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মার্কিন এই ভিসা নীতি শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, অনেক দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তারা বলেছে যে, এটি প্রায় সবদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোনোটা ঘোষণা করা হয়েছে, কোনোটা ঘোষণা করা হয়নি।’
সোমবার থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বিএনপির নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির এই কর্মসূচি গতানুগতিক। তারা কিছুক্ষণ হাঁটে, কিছুক্ষণ বসে, তারপর আবার কিছুক্ষণ ভাংচুর করে, কিছুক্ষণ গাড়ি-ঘোড়া পোড়ায়। এখন হয়তো তারা বসার কর্মসূচি না দিয়ে হাঁটা কিম্বা দৌড়ানোর কর্মসূচি দেবে।’
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে সদ্য সমাপ্ত এশিয়া মিডিয়া সামিটে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী জানান, ‘এশিয়া এবং ওশানিয়া অঞ্চলের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন টেলিভিশন, রেডিও’র কর্ণধারেরা সময়োপযোগী এ সম্মেলন যোগ দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে আমার উপস্থাপিত বিষয়গুলোই সম্মেলনের মূল ঘোষণাপত্রে এসেছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমার উপস্থাপনায় মূলত আমি বলেছি যে, গত ১০-১৫ বছরে পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্ফোরণের কারণে আমাদের জীবনটা পরিবর্তন হয়ে গেছে, যোগাযোগের অবারিত সুযোগের পাশাপাশি অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যেভাবে ফেইক নিউজ তৈরি ও পরিবেশন করা হয়, সে কারণে রাষ্ট্রে ও সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়। এবং সাধারণ মানুষ এই সোশ্যাল মিডিয়ার সংবাদ আর মূলধারার মিডিয়ার সংবাদের পার্থক্য বুঝতে পারে না। সে কারণে নানা সংকট, গুজব তৈরি হয়, সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরি করার চেষ্টা হয়। এ বিষয়গুলোর দিকে তীক্ষè নজর দেওয়া এবং বৈশ্বিকভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য সবাই একযোগে কাজ করার বিষয়টি ‘বালি ঘোষণা’য় এসেছে।’