সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস নামের অতিক্ষুদ্র জীবাণুর এক ধ্বংস লীলা চলছে। এ করোনাভাইরাস বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়ছে গোটা বিশ্ব। এ লড়াই নিজেকে বাঁচানোর এবং অন্যকে বাঁচানোর। অর্থনৈতিক মন্দার হাতছানি দেয়া স্থবির বিশ্বে আগামীর সঙ্কট মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই । স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী থেকেও অন্যকে বাঁচানোর যুদ্ধে ভালবাসার হাত বাড়িয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। লড়াই চালানোর পাশাপাশি আগামীর দিনগুলোর কথা ভেবে দেশে দেশে নেয়া হচ্ছে নানা অর্থনৈতিক প্রস্তুতি। নেয়া হচ্ছে জীবন বাঁচানোর প্রযুক্তি আবিষ্কারের চেষ্টা। এমন পরিস্থিতিতে দেশ ও মানুষের জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশও। ঘর থেকে প্রতিবেশী আর দেশ থেকে বিশ্ববাসীর জীবন বাঁচানোর এ যুদ্ধে এক কাতারে শামিল হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে সবাই ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় করোনাভাইরাসে সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আর প্রতি ঘণ্টায় আসছে মৃত্যুর সংবাদ। সর্বশেষ তথ্যে এই ভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখের বেশি মানুষ আর মারা গেছেন ৪৭ হাজারে ওপরে।
আইইডিসিআর তথ্যমতে, বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ আর মারা গেছেন ৬ জন। শোকের ছায়ায় কাঁদছে গোটা বিশ্ব। তিনমাস হয়ে গেলেও এই নিয়ে এখনও কোন প্রতিষেধকের সুখবর নেই। আর তাই সারাবিশ্বের মানুষই এখন নিজে বাঁচার অন্যকে বাঁচানোর যুদ্ধে এককাতারে শামিল হয়েছেন।
ভাইরাসের আক্রমণের প্রকোপ কমাতে দেশে দেশে লকডাউন, শাটডাউন করে রাখায় স্থবির হয়ে গেছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। এর মধ্যেই স্বপ্ন দেখতে হচ্ছে আগমী দিনের। করোনা গ্রাস থেকে মুক্তির পর কিভাবে চলবে দেশ, জাতি, মানুষ এই পরিকল্পনায় ব্যস্ত পর থেকেই সচেতনতার কথা বেশি বেশি করে বলা হচ্ছে।
ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষদের রক্ষায় গত ২৬ মার্চ থেকে লম্বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। প্রথম ১০ দিনের ছুটি হলেও তা এখন বেড়ে ১৭ দিন হয়েছে। এই সময়ে নিজেকে বাঁচানোর যুদ্ধ করছে সবাই। প্রয়োজন ছাড়া সারাদেশের মানুষ খুব একটা বের হচ্ছেন না। নানা কাজে ছুটে চলা মানুষগুলো নিজেদের প্রয়োজনেই নিজেদের গৃহবন্দী করে রাখছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য কিছু। অন্যান্য পণ্যের ব্যবসায়ীরাও এখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য নিজে নিজে হোম কোয়ারেন্টাইনে সময় কাটাচ্ছেন। সচেতনভাবেই নিজেদের গুটিয়ে রাখছেন মানুষ। একই সময়ে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বা মুঠোফোনে বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কেউ কেউ এগিয়ে আসছেন মানবিক সহায়তায়।
এ বিষয়ে একাধিক মন্ত্রী সচিবের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এটি এমন একটি বিষয় যেখান থেকে বাঁচার উপায় নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে দূরত্ব বজায় রাখা অর্থাৎ ঘরে থাকাই উত্তম। এই সময় ঘরে বই পত্রিকা পড়ে সময কাটাচ্ছেন কেউ কেউ আবার অনলাইনে কাজকর্ম সারছেন। এদিকে, আতঙ্ক আর নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ঘরবন্দী অবস্থায় আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাধ্যমিকের ক্লাস নেয়া হচ্ছে সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে। মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবির জানান, ধারাবাহিক মূল্যায়ন বার্ষিক পরীক্ষার ফলের সঙ্গে যোগ হবে।
এদিকে, করোনার কারণে সবাই যেখানে গৃহবন্দী সেখানে বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের অসচ্ছল দরিদ্র মানুষগুলো। কাজ না থাকায় আয় নেই, নেই খাবারের নিশ্চয়তাও। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সমাজের অন্যান্য মানুষ। ব্যক্তি উদ্যোগ, সামাজিক বা বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে নিত্যপণ্য নিয়ে দরিদ্রদের ঘরে ঘরে খাদ্যপণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে ৬৪ জেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, ৩৯ হাজার ৬৬৭ টন চাল ও ১১ কোটি ২৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে বিনামূল্যে দরিদ্ররা এসব সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি সারাদেশে ৫০ লাখ কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি যেটা ঢাকার বাইরে সেই কর্মসূচী চালু রয়েছে। ঢাকায় খোলাবাজার ব্যবস্থার (ওএমএস) মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি সেটিও চালু রেখেছে সরকার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শাহ্ কামাল বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ ইতোমধ্যেই ডিসিদের কাছে অনেক আগেই পৌঁছে গেছে। আমরা প্রথমে ৮ কোটি টাকা ২৮ হাজার ৭১৭ টন চাল দিয়েছি। পরে আরও বরাদ্দ দিয়েছি। এসব গরিব, নিম্ন আয়ের মানুষ বিনা পয়সায় পাবে। ৯ লাখ মানুষ এর সুবিধা পাবেন বলেও জানা গেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু আছে। বর্তমানে সারাদেশে ৫০ লাখ কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি যেটা ঢাকার বাইরে সেই কর্মসূচী চালু রয়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ঢাকায় ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি করবে। আগামী সপ্তায় এটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এতে করে শহরের স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে রিক্সাচালক, সিএনজি চালক, অটোচালক, চা বিক্রেতাসহ সবার খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।