ওয়ান হেলথ বাস্তবায়নসহ ভবিষ্যতে যেকোন মহামারী মোকাবিলায় বৈশ্বিক সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
সোমবার (১২ জুন) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ১১তম ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ কনফারেন্স ২০২৩-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য প্রদানকালে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বের একজনকেও পেছনে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সবাই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোভিড-১৯ প্রমাণ করেছে, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বিশ্ব কতটা অপ্রস্তুত ছিল। কোভিড প্রতিরোধের উপায় কারো জানা ছিলনা। কিন্তু মানুষ তার সামর্থ্য দিয়ে, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। কিন্তু এটাই শেষ নয়। আগামীকাল কোভিডের চেয়ে অধিক বিপদজনক কিছু আসবে কি না বা অন্য কোন মহামারী আসবে কি না তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। এজন্য যে মানুষগুলো পৃথিবীতে বাস করছে, তাদের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে। যেখানে বিশ্বের জ্ঞানী ব্যক্তিরা অবদান রাখতে পারে। এক্ষেত্রে মানবতার কল্যাণে যে সৃজনশীলতা ও গবেষণা প্রয়োজন তা বাংলাদেশ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
তিনি যোগ করেন, ওয়ান হেলথ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ধারণায় পরিণত হয়েছে । বিশেষ করে করোনা সংকটে ওয়ান হেলথ এর প্রয়োজনীয়তা আমরা উপলবদ্ধি করেছি। এ জন্য ১১তম ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ কনফারেন্স আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে প্রায় ৭০ শতাংশ সংক্রামক রোগ প্রাণী থেকে উদ্ভব হয়ে মানুষের মধ্যে প্রাদুর্ভাব তৈরির ইতিহাস রয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে গবাদিপশুতে রোগের প্রাদুর্ভাব সনাক্তকরণ, প্রতিরোধ এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে একটি শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবী। প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগের বিস্তার রোধে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করার কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ওয়ান হেলথ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করছে। প্রাণিরোগ প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ এবং প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা উন্নত করতে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যার মধ্যে প্রাণী রোগ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি পরিচালনা, রিয়েল-টাইম ডাটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং রিপোর্টিংয়ের জন্য বাংলাদেশ অ্যানিমেল হেলথ ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম তৈরি অন্যতম।
তিনি রোগ করেন, ওয়ান হেলথ এর জন্য প্রাণীর চিকিৎসা পদ্ধতি, ঔষধ এসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণীর অসুস্থতা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রাণীর সুচিকিৎসা মানব স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জরুরি প্রাণিচিকিৎসার জন্য মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালু করেছে। এর মাধ্যমে প্রাণী ডাক্তারের কাছে নয় বরং ডাক্তার অসুস্থ প্রাণীর কাছে তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে যাচ্ছে। এটি প্রাণিস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাঠ পর্যায়ে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ান হেলথ এর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার ওয়ান হেলথ বিষয়ক একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে এবং ওয়ান হেলথ সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের ওয়ান হেলথ সচিবালয় আরও শক্তিশালী করতে হবে।এটিকে একটি ওয়ান হেলথ এর তথ্য আদান-প্রদান এবং সমন্বয় হাব হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, যাতে প্রাণী, মানুষ এবং পরিবেশগত ক্ষেত্রে উদ্ভুত যে কোনও স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থার জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয়।
মন্ত্রী আরও বলেন, ওয়ান হেলথ এর কার্যক্রম শুধু ঢাকা শহর বা বিভাগীয় শহরে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না বরং প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে আমরা ওয়ান হেলথ এর লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো না। ওয়ান হেলথ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জরুরি। সমন্বয়ের অভাব হলে ওয়ান হেলথ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এর জন্য শুধু কনফারেন্স বা এ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ পর্যাপ্ত নয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন লাগবে। এটি হতে পারে প্রযুক্তিগত, হতে পারে ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশে, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও বক্তব্য প্রদান করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেন চৌধুরী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বার্দান জং রানা এবং ইউনিসেফ-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ-এর জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক ড. মাইকেল রায়ান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ওয়ান হেলথ সচিবালয়ের চেয়ারম্যান ও আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন।