সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্তি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে একদফা দাবি আদায়ে ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
আগামীকাল (মঙ্গলবার) ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সিলেট, বরিশাল, খুলনা, চট্রগ্রাম বিভাগসহ মোট ৫ বিভাগে রোড মার্চ। পাশাপাশি ৬টি সমাবেশ এবং ২টি কনভেনশন ও আইনজীবীদের কর্মসূচিসহ একটি দোয়া মাহফিল করা হবে এই ১৫ দিনের মধ্যে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ৩০ মিনিট রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন অফিসে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ থাকায় তার বদলে কর্মসূচি ঘোষণা করেন নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা জেলা জিনজিরা, কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশ হবে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভৈরব- ব্রাহ্মণবাড়িয়া- হবিগঞ্জ- মৌলভীবাজার- সিলেটে রোডমার্চ। সিলেট বিভাগের রোড মার্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা যোগদান করবেন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশুরোগ মুক্তি কামনায় বাদ জুমা সারা দেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি জানান, শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বরিশাল- ঝালকাঠি- পিরোজপুর-পটুয়াখালীর রোড মার্চ। বরিশাল বিভাগের রোড মার্চে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং জাতীয় শিক্ষা কমিটির সদস্য সেলিমুর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা যোগ দেবেন। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলা আমিন বাজারের সমাবেশ।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) খুলনা বিভাগের রোড মার্চ। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা যোগ দেবেন। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা জন সমাবেশ। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় মহিলা সমাবেশ। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা শ্রমজীবী কনভেনশন।
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, রোববার (১ অক্টোবর) ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোড মার্চ। ময়মনসিংহ বিভাগের রোড মার্চে স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান এবং সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা যোগ দেবেন। সোমবার (২ অক্টোবর) ঢাকায় কৃষক সমাবেশ। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) কুমিল্লা- ফেনী- মিরসরাই- চট্টগ্রামে রোড মার্চ। চট্টগ্রাম বিভাগের রোড মার্চে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মামুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা যোগ দেবেন।
পাশাপাশি আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং কর্মসূচিতে আন্দোলনরত সব দল সমর্থন দেবে বলে জানান নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদের দাবি না মেনে এককভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করে তাহলে জনগণ সেটা মেনে নেবে না। সারা দুনিয়া জানে যে, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তারপরও যদি তারা নির্বাচন করে তাহলে শুধু জনগণ বা আমরা নয়; গোটা দুনিয়া বুঝবে সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। এর ফলে পুরো দুনিয়ার সবাই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, অপশক্তিকে দূর করার জন্য বিএনপি লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক উপায় বিশ্বাস করি। আর আমাদের পন্থাটি শান্তিপূর্ণ। আর তা সরকার মানবে কি মানবে না এটা সরকারের বিষয়। পুরো বিশ্বের কাছে সরকারের নৈতিক পরাজয় ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। তবে আমাদের কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছি যেখানে মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকার টিকে থাকতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, চিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়ার কিছু হলে এক দায়ভার সম্পূর্ণ সরকারকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে বেশি যে ভূমিকা রেখেছেন তিনি হলেন বেগম খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে আপনারা খবর পেয়েছেন, তিনি ক্রিটিক্যাল অবস্থায় সিসিইউতে ভর্তি। গতকালের তুলনায় আজ কিছুটা ভালো আছেন। তবে মেডিকেল বোর্ড বলছে, তার চিকিৎসার জন্য অ্যাডভান্স হাসপাতালের প্রয়োজন আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন হাসপাতাল নেই। তাই আমরা বার বার বলছি, সরকার যেন বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরা যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি এতে সমমানের দলগুলোর অংশগ্রহণ করা সম্ভব হবে তারা অংশ নেবেন। আর কখন আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেবে সেটা রাস্তায় বলে দেবে। জনগণের স্বার্থের বাইরে গেলে কোনো সরকারি টিকে থাকতে পারে না। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই সরকারও টিকে থাকতে পারবে না।