হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সফট ওপেনিং (আংশিক উদ্বোধন) করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (০৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে তৃতীয় টার্মিনালে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টার্মিনালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সফট ওপেনিংয়ের পর আজ রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশের নেপালগামী একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স। উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে মহড়াও সম্পন্ন হয়েছে।
এ টার্মিনালের একাংশে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষামূলক অংশ হিসেবে টার্মিনাল-৩ এর পার্কিং বে’তে থেকে প্রথমবারের মতো ফ্লাইটে যাত্রী তুলেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট।
সোমবার (২ অক্টোবর) বিমানের ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু রুটের ফ্লাইটটি (বিজি-৩৭১) প্রথমবারের মতো তৃতীয় টার্মিনালের হাই-স্পিডি ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে পার্কিং বেতে প্রবেশ করে। পার্কিং বেতে অবস্থানের পর তৃতীয় টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে ফ্লাইটে ওঠেন কাঠমান্ডুর যাত্রীরা।
ফ্লাইটটি বিমানের বোয়িং-৭৩৭ মডেলের ‘ময়ূরপঙ্খি’ নামের একটি এয়ারক্রাফট নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) একইভাবে টার্মিনাল-৩ ব্যবহার করেছে বিমানের ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটের আরেকটি ফ্লাইট।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. শফিউল আজিম জানান, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ এর সফট ওপেনিংয়ের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সম্পূর্ণ প্রস্তুত। টার্মিনাল-৩ এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, দায়িত্ব পালনকারী জনবলের জন্য আন্তর্জাতিক মানের নতুন ইউনিফর্ম প্রস্তুত করা হয়েছে।
তবে, টার্মিনাল উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কাওলা সিভিল এভিয়েশন মাঠে আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত জনসমাবেশটি স্থগিত করা হয়েছে। জানা গেছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য সমাবেশটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ১৪ অক্টোবর একই স্থানে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় তিনতলা বিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির আয়তন হবে ২ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গমিটার এবং লম্বা ৭০০ মিটার ও চওড়া ২০০ মিটার। এ ভবনটির নকশা করেছেন রোহানি বাহারিন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সিপিজি কর্পোরেশন প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর এর স্থপতি।
৩য় টার্মিনাল ভবনে প্রথম পর্যায়ে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ১৪টি বোডিং ব্রিজ স্থাপন করা হবে। বহির্গমনে মোট ১১৫টি চেক-ইন-কাউন্টার থাকবে, এর মধ্যে ১৫টি থাকবে সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টার। আগমনী লাউঞ্জে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট চেক ইন কাউন্টার থাকবে।
এছাড়া, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালের সাথে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে প্রায় ১২৫০টি গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের ভেতরেই ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের জন্য সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আলাদা নির্ধারিত অংশ থাকবে। শুধু তৃতীয় টার্মিনাল দিয়ে বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে।