দুই মন্ত্রীর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বৈধ : আপিল বিভাগ

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিমের নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-১ ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ বৈধ বলে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

শুনানিতে আপিল বিভাগ অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধানের ১২৪ অনুচ্ছেদে সীমানা পুর্নির্ধারণের আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। ওই ক্ষমতাবলেই সংসদ বা সরকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী পিরোজপুর ১ ও ২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে ইসি। আর এই সীমানা পুনর্নির্ধারণ কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলেও সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রাথমিক প্রস্তাবনায় কোনো পরিবর্তন না থাকায় আপত্তি দেওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই এখানে সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনের পুরো প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।

শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-১ ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বৈধতা নিয়ে জারি করা রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছেন। আইনের কোন ব্যত্যয় হয়নি। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারীরা।

গত ৩০ জুলাই মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিমের নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-১ ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে ‍রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের ২ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান,ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন মিয়াজী।

এর আগে পিরোজপুর-১ ও পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন পিরোজপুরের কাউখালীর বাসিন্দা আবু সাঈদ মিয়া, ভান্ডারিয়া পৌরসভার বাসিন্দা মো. কায়কোবাদ, মো. আহসানুল কিবরিয়া, ইন্দুরকানী উপজেলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান, নেছারাবাদ উপজেলার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম শরীফ।

গত ৩ জুন প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পিরোজপুর-১ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে পিরোজপুর-২ আসনে থাকা ইন্দুরকানি উপজেলা। আর পিরোজপুর-১ আসন থেকে কেটে নেছারাবাদ উপজেলাকে যুক্ত করা হয়েছে পিরোজপুর-২ আসনের সঙ্গে। ফলে এখন পিরোজপুর-১ আসনের সীমানায় থাকছে পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি উপজেলা।

অন্যদিকে পিরোজপুর-২ আসনে থাকছে কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ উপজেলা। ইন্দুরকানি উপজেলা বাদ দিয়ে এখানে নেছারাবাদকে যুক্ত করায় নাখোশ এ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য হলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম।