ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ রাজনীতির বটবৃক্ষ ও সিংহপুরুষ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় সাবেক ধর্মমন্ত্রী প্রয়াত অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে। বর্ষীয়ান এ নেতা চলতি বছরের আগস্টে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শতলে ভিড়িয়েছেন অসংখ্য মানুষকে। ছিলেন আওয়ামী লীগের দুই বারের সংসদ সদস্য।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। প্রয়াত অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের রেখে যাওয়া সেই নৌকা এবার তার ছেলে মোহিত উর রহমান শান্তর হাতেই তুলে দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মোহিত উর রহমান শান্তর নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই ময়মনসিংহ সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে শিববাড়িস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এসে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। পরে সেখানে একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান তারা। ময়মনসিংহ সদর আসনে নৌকার প্রার্থী দেওয়ায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানও ঘটেছে বলে জানান সাধারণ মানুষ।
দুই মেয়াদে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মোহিত উর রহমান শান্ত ১৯৯০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন যুক্ত হন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সেই সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও সরব ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ শহর শাখা ছাত্রলীগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, শহর ছাত্রলীগ ও আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন এবং আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচিতে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত রেখে রাজপথে সরব ছিলেন শান্ত। ২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার অভিযোগে বাবা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সঙ্গে শান্তকেও গ্রেপ্তার করা হয় এবং ৪৫ দিন কারাবরণ করেন তিনি। এছাড়া বিএনপি শাসনামলে আরও ১৭ দিন কারারুদ্ধ ছিলেন শান্ত।
রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজেও সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে মোহিত উর রহমান শান্তর। তিনি ময়মনসিংহের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের বিদ্যালয় ‘ঘাসফুল’ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। প্রয়াত ভাইয়ের নামে ডা. শুভ এতিমখানা ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান একাডেমির দাতা সদস্যও তিনি। এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য প্রয়াত সায়েমের স্মৃতি রক্ষার্থে গঠিত দিপু সায়েম ক্রীড়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা এবং মিন্টু কলেজ জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবেও রয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী করায় দলের প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মোহিত উর রহমান শান্ত। রোববার এক প্রতিক্রিয়ায় শান্ত বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার বাবাকে সারাজীবন এই আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমার বাবা গত হয়েছেন এ বছরের শোকাবহ আগস্ট মাসেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সম্মান জানিয়েছেন আমাকে মনোনীত করার মাধ্যমে। সারাজীবন বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার প্রতি আমার বাবার যে বিশ্বস্ততা, সেই লড়াই-সংগ্রামের প্রতিদান দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমি ছাত্রলীগ করেছি, বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলাম। শুধুমাত্র এইটুকু অর্জনের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সদরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে আমার জন্য মনোনয়ন পাওয়াটা সম্ভব ছিল না। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার বাবার সারাজীবনের লড়াই-সংগ্রাম এবং আদর্শচ্যুত না হওয়ার পুরস্কার হিসেবে আমাকে এই আসনটি উপহার হিসেবে দিয়েছেন।
নৌকার কান্ডারি মোহিত উর রহমান শান্ত আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যে মূল্যায়ন আমার বাবাকে করেছেন আমি সেটির প্রতিদান দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। আমার বাবা কর্মের মাধ্যমে ময়মনসিংহবাসীর মাঝে বেঁচে আছেন। সন্তান হিসেবে আমি বাবার কর্মপন্থা, ত্যাগ ও লড়াই-সংগ্রাম করা উদ্যোম দেখেছি। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব বাবার মতো করে, বাবার পথ অনুকরণ করে মানুষের মাঝে থাকার। আর আমি যদি মানুষের মাঝে থাকতে পারি তাহলে এই আসন জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য নিরাপদ থাকবে। বিজয়ের মাধ্যমে এ আসনটি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে উপহার দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে সৎ রেখে ময়মনসিংহের মানুষের সেবা করে আমার বাবার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসা-শ্রদ্ধা ও সম্মানের প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করে যাব।