দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্যদের সঙ্গে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিতরাও সরকারের সমালোচনা করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনীতদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এর আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু একই প্রসঙ্গে বলেন, ১৩ জন সদস্য নিয়েই তারা সংসদ কাঁপিয়ে তুলবেন।
যেহেতু সব দল নেই, সেক্ষেত্রে সংসদ কতটা কার্যকরী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংসদ কেন কার্যকর হবে না। বাধাটা কোথায়? একটা ফ্রি, ফেয়ার নির্বাচন হয়েছে, যেখানে টার্ন আউট ফোরটি ওয়ান প্লাস। এখানে ২৮টি দল অংশ নিয়েছে। একটি অপজিশনও আছে। বিরোধী দলের ভূমিকায় জাতীয় পার্টি অলরেডি তাদের কার্যক্রম সংসদে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বিরোধী দল আছে, এমনকি স্বতন্ত্রদের বলা হয়েছে, তারা যখন আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন বলা হয়েছে প্রয়োজনে তারা মনে করলে সরকারের সমালোচনাও করতে পারেন। সমালোচনার জন্য স্বতন্ত্ররা আছেন, বিরোধী দল তো আছেই। তাই সংসদ কার্যকর হওয়ার পথে কোনো অন্তরায় বা বাধা আছে বলে আমরা মনে করি না।
বিএনপি তো বলছে সংসদে কেবল সরকারপন্থীদের আওয়াজ, এ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়াজ তো তাদেরও ছিল। সে আওয়াজ এখন কোথায়? সে আওয়াজ তো পালিয়েছে। তারা সরকারকে পালাতে বলেছে, এখন নিজেরাই পালিয়েছে। বাস্তবতা হলো তাদের আওয়াজ তো কাজে দেয়নি।
তিনি বলেন, আমরা যা বলেছিলাম- ইলেকশন করব, ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন, জনগণ অংশ নেবে, প্রতিহত করার দুঃসাহস কারো নেই, আমরা শেষ পর্যন্ত সতর্ক পাহারায় আছি। এখনো আমরা সতর্ক পাহারায় আছি। যদি কেউ এ নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্রমূলক-সন্ত্রাসমূলক কোনো তৎপরতায় আসে, তখন আমরা অবশ্যই প্রতিরোধ করব। দেশের জনগণকে নিয়ে তা প্রতিহত করব।
বিএনপির আন্দোলনের ডাক নিয়ে তিনি বলেন, এটি আষাঢ়ের তর্জন-গর্জন। বিএনপির কোমর ভেঙে গেছে আজীবনের জন্য। বাস্তব তো তাই-ই। নির্বাচনের পরে যে তর্জন-গর্জন তারা করেছে, তা তো বাস্তবে অন্তঃসারশূন্য। আমরা তো কিছুই দেখছি না। আন্দোলন কাকে বলে, আন্দোলনে পাবলিক থাকতে হবে। তাদের নেতা-কর্মীরা আন্দোলন করতে পারেনি। বেশিদূর যেতে পারেনি। কারণ আন্দোলনের বস্তুগত পরিস্থিতি দেশে বিরাজমান ছিল না, এখনো নেই। প্রস্তুতিতে তারা নেতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে তারা ভুল করেছে। ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে।
বিএনপির কোমর ভেঙে গেছে, ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের এ মন্ত্রী বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ কথাটি প্রকাশ্যে বলে গিয়েছেন যে, বিএনপি হলো কোমরভাঙা, হাঁটুভাঙা দল। আমি জাস্ট তাকে কোট করলাম। কোমর ভাঙার কথা আমি বলিনি, জাফরুল্লাহ বলেছেন।
জাতীয় পার্টি কী পারবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংসদ চলুক। যখন বাগবিতণ্ডা হবে, পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা হবে তখন বুঝতে পারবেন। তারা আসেনি কেন? আমরা আসতে দিইনি, এটি হাস্যকর। বিএনপিকে নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ তারা যা মুখে বলছে, তা করে দেখাতে পারেনি। দেশের মানুষকে তারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। মানুষ সম্পৃক্ত হলে আন্দোলন সফল হয়।
যুবলীগ থেকে বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। তারা সেটি করতে পারে। তবে আমাদের দল থেকে তা করা হয়নি। এখন ছাত্রলীগ যদি বলে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করা হোক, আমরা কি সেটার সঙ্গে লাফাব? যুবলীগ তাদের চিন্তা থেকে বলছে। যুবলীগ চাইলে তো আর একটি জাতীয় দল নিষিদ্ধ হয়ে যাবে না। নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টা তো আমরা আমাদের মূল দল, কোনো নেতা-কর্মী এ পর্যন্ত বোধ হয় বলিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজনে যারা সাধারণ নির্বাচনে হেরেছেন, তাদের কয়েকজনকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দিয়েছি।
সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নপত্র জমার প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, সর্বমোট ৪৮ জনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। এ ৪৮ জনের প্রস্তাবক, সমর্থক আছেন, যারা জাতীয় সংসদ সদস্য।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি বাছাই হবে। প্রত্যাহার করা যাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর ভোটের তারিখ ১৪ মার্চ। কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে এ সময়ের পরই ঘোষণা হবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নাম।