গাজায় ইসরায়েলি হামলা শতাব্দীর অন্যতম ‘শ্রেষ্ঠ বর্বরতা’ : এরদোয়ান

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।

এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে শতাব্দীর অন্যতম ‘শ্রেষ্ঠ বর্বরতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।

একইসঙ্গে নেতানিয়াহু সরকার ‘ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্লজ্জ গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। বুধবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান মঙ্গলবার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান ‘বর্বরতার’ বিরুদ্ধে আবারও নিন্দা জানিয়েছেন। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গত ১৫১ দিন ধরে আমরা গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বর্বরতার সাক্ষী হয়েছি।’

‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ গণহত্যা’ চালানোর জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে অভিযুক্ত করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর এই বর্বরতা ‘পশ্চিমা শক্তির সীমাহীন সমর্থনে’ ঘটছে।

তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, ‘নেতানিয়াহু এবং হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগীদের অবশ্যই আইন ও জনসাধারণের বিবেকের সামনে প্রতি ফোঁটা রক্তের জন্য জবাবদিহি করা হবে।’

তিনি অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের পদক্ষেপেরও সমালোচনা করেন। এরদোয়ান বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের মালিকানাধীন জমি দখল করে আছে তারা, আর এটি সংকট সমাধানের সবচেয়ে বড় বাধাগুলোর মধ্যে একটি।’

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে মুসলমানদের প্রবেশাধিকার সীমিত করতে কট্টরপন্থি ইসরায়েলি রাজনীতিবিদদের করা ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’ দাবির নিন্দা করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সকল ধর্মের ধর্মীয় স্থানগুলোতে প্রবেশাধিকার বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

এছাড়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সিকে (ইউএনআরডব্লিউএ) অসম্মান করার জন্য ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকেও তিরস্কার করেছেন এরদোয়ান।

তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ‘মিথ্যা তথ্য ও অপবাদ’ দিয়ে সংস্থাটিকে অসম্মান করার যে প্রচেষ্টা তেল আবিব চালাচ্ছে তাকে বিশ্বাস করা উচিত নয়। একইসঙ্গে এই সংস্থার অস্তিত্বকেও খর্ব করা উচিত নয়।’

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সাথে সন্দেহজনক সংশ্লিষ্টতার কারণে ইউএনআরডব্লিউএর তহবিল স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি এবং কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে সংস্থাটি তার বেশ কয়েকজন কর্মীকেও বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছে।

ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘স্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ হলো ১৯৬৭ সালের সীমানার মধ্যে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষ।