মশা নিধনে সারাদেশে ৪০ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, এডিস মশার প্রকোপ কমাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ কোটি ও সারাদেশের জন্য ৪০ কোটি টাকার ওষুধ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের জনসচেতনতা বাড়াতে ও প্রচারণায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বুধবার (০৬ মার্চ) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় ও শেষ অধিবেশনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়নও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

তাজুল ইসলাম বলেন, পুরো পৃথিবী অনুধাবন করছে যে এডিস মশা মোকাবিলা করতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার বা হাতিয়ার ৯০ শতাংশ সচেতনতা। আর বাকি ১০ শতাংশ টেকনিক্যাল বা ওষুধ। তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন৷ এটা যদি সম্ভব হয় তাহলে এডিস মশার প্রজননটা আমরা রোধ করতে পারবো। আগে যদি আমরা ঢাকার বাইরে এক পারসেন্ট এডিস মশার প্রকোপ দেখতাম, বাকি ৯৯ শতাংশই কিন্তু দেখা যেত ঢাকা শহরে। গত বছর এডিস মশার প্রকোপ ঢাকায় কমে নেমেছে ২০ শতাংশের নিচে। কিন্তু ঢাকার বাইরে হয়েছে ৮০ শতাংশ।

তিনি বলেন, প্রতিদিন আগে যে পরিমাণ আমাদের সন্তান বা মানুষ ঢাকায় আক্রান্ত হতো। এখন তা হচ্ছে ঢাকার বাইরে অর্থাৎ ঢাকার মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। এডিস মশাকে মোকাবিলা করার জন্য আমরা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য টিভিসি প্রচার করেছি, মানুষ সেটা দেখে দায়িত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।

এসব কারণে ঢাকায় এডিস মশার প্রকোপ কমেছে ও সফলতা এসেছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী।

এব্যাপারে ডিসিদের কী বলেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা এই অবস্থাটা জানিয়েছি। তাদেরকে বলা হয়েছে এ ব্যাপারে এখনই ইনিশিয়েটিভ নেওয়ার জন্য। তারা জনসচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ করছেন। তাছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে যেসব সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে তাতেও গ্রামাঞ্চলের মানুষও সচেতন হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি সঠিকভাবে দেখভাল করা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে ডিসিদের মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ডিসিরা তো তদারকি করবেন। আর রিপোর্ট করবেন। আর কার কি দায়িত্ব সেটা তো বণ্টন করে দেওয়াই আছে। আমরা কিন্তু গত জানুয়ারিতেই সভা করেছি। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা ধরে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। গত বুধবারে সভা করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর সারা দেশের জন্য ৪০ কোটি টাকার ওষুধ কেনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তুতিগুলো চলমান। মন্ত্রণালয় তথা সরকারের পক্ষ থেকে যে সমস্ত পদক্ষেপ, জনসচেতনতায় প্রচারণা দরকার তা করা হচ্ছে।

সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচন কেন্দ্রীক কোনো নির্দেশনা ডিসিদের দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন তো হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন যেসব সহযোগিতা চায় তা করবো। তবে নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কোনো ইন্টারভেনশন বা ইন্টারফেয়ার নাই। নির্বাচনের ব্যাপারটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের অংশ নয়। এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে পুরো ক্ষমতা দেওয়ার আছে।

ডিসি সম্মেলনে ২৫৬টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন ডিসিরা। বেশিরভাগই হচ্ছে রাস্তাঘাট সংস্কারের ২২টি। পৌরসভা ও উপজেলার যেসব রাস্তা সংস্কার করার বিষয় রয়েছে ডিসিরা এসব বিষয়ে কোনো সুপারিশ বা আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, এসব তো আলোচনায় অনুপস্থিত থাকার কথা নয়। জাতীয়ভাবে একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা আছে। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশ বানাবো। উন্নত বাংলাদেশ বানাতে হলে তো আমাদের রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।

সমবায়ভিত্তিক কৃষিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্ব দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, সমবায়ভিত্তিক কৃষি, সমবায় ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। সমবায়ের ব্যাপারে আমরা কাজ করার কথা বলেছি। সমবায় ব্যবস্থাপনাকে আরো বেশি গতিশীল ও শক্তিশালী করার ব্যাপারে বলেছি।

স্থানীয় জলাশয় ও পানি সংরক্ষণ করার বিষয়ে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা কারণ গত বছর এই আবহাওয়ায় পানি সংকট তৈরি হয়েছিল৷ তখন প্রধানমন্ত্রী জলাশয়গুলো সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আজকেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রী।