সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (২০২৪-২০২৫) নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অপরদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছে সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
শনিবার (০৯ মার্চ) দিবাগত রাতে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ী প্রার্থীরা হচ্ছেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন) এবং সদস্য পদে সৈয়দ ফজলে এলাহী, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম শফিক।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হচ্ছেন- সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির।
সদস্য পদে বিজয়ী প্রার্থীরা হচ্ছেন- মো. বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, মো. রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন।
নির্বাচনে এই দুই প্যানেল ছাড়াও সভাপতি পদে মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ও মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান)। সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভুঁইয়া এবং মো. সাইফুল ইসলাম কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।
প্রায় আট হাজার ভোটারের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২০২৫ সেশনের দুদিনব্যাপী নির্বাচনের প্রথমদিনে ভোট পড়েছিল তিন হাজার ২৬১টি। শেষদিনে পড়েছে দুই হাজার ৫৮ ভোট। সব মিলিয়ে ভোট পড়েছে পাঁচ হাজার ৩১৯টি।
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ভোরে আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে হট্টগোল, বাদানুবাদ, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখায় যায়, মিলনায়তনের ভেতরে কয়েকজন লোক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফকে মারধর করছেন। আর তিনি দৌড়ে মারধরের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। পরে তিনিসহ আরও একজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তবে রাতে ভোট গণনা করা ও না করা নিয়ে এ বিরোধের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আইনজীবী। তিনজনের মধ্যে দুজন সম্পাদক প্রার্থী রাতেই ভোট গণনা চান। এরপর ভোট গণনা শুরু হয়। কিন্তু অপরজন শুক্রবার বিকেল ৩টায় গণনা চান। এ নিয়ে মিলনায়তনে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের একটি ঘোষণা দেন। এতে নাহিদ সুলতানা যুথিকে সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেন।
তবে আবুল খায়ের শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, ভোট গণনা হয়নি। ব্যালট সিলগালা অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে আছে। ভোট গণনা করে দুয়েকদিনের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
এরপর শনিবার এক নোটিশে নাহিদ সুলতানা যুথিকে সম্পাদক ঘোষণাকে অর্থহীন বলেছেন নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়ের। নোটিশে ওই ঘোষণাকে ইগনোর করতে বলা হয়েছে।
একইদিন দুপুরে পৌনে তিনটা থেকে ভোট গণনা শুরু করে নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটি। গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এদিকে শাহবাগ থানায় শুক্রবার সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন এস আর সিদ্দিকী সাইফ। সেই মামলায় শুক্রবার রাতে পাঁচ আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিবার তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া শনিবার রাতে রুহুল কুদ্দুস কাজলকেও গ্রেপ্তার করা হয়।