
সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণের নির্দেশিকা এবং নীতিমালা প্রণয়ন করে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এজন্য একটি কমিটি গঠনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নাবালক সন্তানের অভিভাবকত্ব থেকে নারী বঞ্চিত হওয়ার বিষয়ে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (২২ এপ্রিল) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
থিঙ্ক লিগ্যাল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষ এবং একাডেমি অব ল অ্যান্ড পলিসি (আলাপ) এর পক্ষে যৌথভাবে এ রিট করা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, আইনজীবী আনিতা গাজী রহমান রাশনা ইমাম, মাসুদা রেহানা বেগম ও আয়েশা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
পরে ব্লাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রুলে অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ এর ১৯ (খ) ধারাকে কেন মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনকারী এবং সংবিধানের সঙ্গে বিশেষত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৬ (মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইনসমূহ), অনুচ্ছেদ ২৭ (আইনের চোখে সমতার অধিকার) এবং অনুচ্ছেদ ২৮ (লিঙ্গ, ধর্ম ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আচরণ নিষিদ্ধ) এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন।
একইসঙ্গে অভিভাবকত্ব নির্ধারণের নির্দেশিকা এবং নীতিমালা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে প্রস্তুতকৃত নির্দেশিকা এবং নীতিমালাটি রুল জারির চার মাসের (৪ আগস্ট) মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার জন্য মামলার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, নারীর মানবাধিকার নিশ্চিতের পথে এটি একটি যুগান্তকারী আদেশ। সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণ বিষয়ক এ আইনটি একবিংশ শতাব্দীতে কোনোভাবেই প্রযোজ্য হতে পারে না। নাবালকের তত্ত্বাবধান ও অভিভাবকত্ব বিষয়ক এ আইনটি সংশোধন হলে সমাজে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।
নারীপক্ষের সদস্য আইনজীবী কামরুন্নাহার বলেন, আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি মা ও মাতৃত্বকে মহিমান্বিত করলেও নারীর প্রতি সর্বদা হীন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে। সন্তানের অভিভাবকত্ব ও প্রতিপালন বিষয়ক প্রচলিত আইনেও আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাই। বৈষম্যমূলক এসব আইনের কারণে অধিকাংশ নারীকে বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তান না পাওয়ার বঞ্চনা ও বেদনা নিয়েই থাকতে হয়। আমরা আশা করি, আজকের এ প্রগতিশীল আদেশ অভিভাবকত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, আজকের এ আদেশটি পরিবারের অভ্যন্তরীণ এবং শিশুদের অভিভাবকত্ব বিষয়ক অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীদের সমতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এবং একইসাথে, ঔপনিবেশিক কাল থেকে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইন, প্রচলিত সামাজিক ধ্যান-ধারণা দূর করে প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।