আমাদের অর্থনীতি প্রতিদিন এখনো নিম্নগামী: জিএম কাদের

আমাদের অর্থনীতি প্রতিদিন এখনো নিম্নগামী বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে সারা বিশ্বে বড় ধরনের অর্থনেতিক মন্দার ধাক্কা লেগেছিল। ধীরে ধীরে প্রায় দেশই এর থেকে উত্তরণে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশ উত্তরণের পথে অগ্রসরমান। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। আমাদের অর্থনীতি প্রতিদিন এখনো নিম্নগামী। উত্তরণ তো দূরের কথা অধঃপতন ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে।

শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে অস্থির চিত্র তার কিছু কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি, টাকার বিনিময় হারের পতন, সীমিত রপ্তানির প্রবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, উচ্চ নন-পারফরমিং ঋণ, সরকারের সংকুচিত আর্থিক ক্ষমতা, এডিপি ব্যয়ের হ্রাস, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের ওপর অতি নির্ভরশীলতা, বিদেশি বিনিয়োগের পতন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস বড় কারণ।

জিএম কাদের বলেন, কোনো দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে বলা যায়। রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় যতক্ষণ না দেশের মোট আমদানি ব্যয়ের সমান বা বেশি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত রিজার্ভের ক্রমাবনতি অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে আইএমএফের ঋণের ছাড় ও অন্যান্য বিদেশি সাহায্য বা অন্যান্য ঋণের অর্থে হঠাৎ রিজার্ভ বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু এই রিজার্ভ আবার কমতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না রপ্তানি ও প্রবাসী আয় আমদানি ব্যয়ের চেয়ে বেশি থাকবে। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় বর্তমানে আমদানি ব্যয় যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করার পরেও রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে আমদানি ব্যয় একটা পর্যায়ের নিচে কখনই নামানো সম্ভব হবে না। যেহেতু দেশে আমদানি চাহিদার একটি নিম্নতম স্তর আছে। তাছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হ্রাস এবং আমদানি হ্রাস পেলে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয় , টাকার অবমূল্যায়ন এবং মূল্যস্ফীতি হয়। ফলে আমদানি ব্যয় সংকোচনের ফলে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে আসার মাধ্যমে যদি রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখা না যায়; তাহলে সার্বিক অর্থনীতিতে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দেবে।