পতিত স্বৈরাচার আবার পুনর্বাসিত হলে বাংলাদেশ ‘জল্লাদের উল্লাস ভূমি’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর এলিফেন্ট রোড এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, কেউ কেউ যখন স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের কথা বলে জনগণের কাছে বিপদজনক বার্তা পৌঁছায়। যখন কোনো উপদেষ্টা বলেন তাদেরকে নিজেদের ঘর গোছানোর জন্য, সেটি অত্যন্ত বিপদজনক বার্তা দেয়। যারা এতদিন গুম-খুন আর আয়না ঘরের সংস্কৃতি তৈরি করেছিল তারা যদি পুনর্বাসিত হয় তাহলে এদেশে আর মানুষ বসবাস করতে পারবে না। এই দেশ হবে জল্লাদের উল্লাস ভূমি। এখানে গণতন্ত্র, কথা বলা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চিরদিনের জন্য গোরস্তান হয়ে যাবে, গোরস্থানে চলে যাবে।
রিজভী বলেন, এখনো যারা গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করেছেন আন্দোলন এবং বিপ্লব জুলাই-আগস্টে যে অ্যাডভাইজার হচ্ছে, বিভিন্ন পদে যাচ্ছেন তারা যখন এই ধরনের বার্তা (আওয়ামী লীগকে ঘর গোছানো উচিত) দেন তখন এটা সাংঘাতিক ধরনের প্রাণঘাতী বার্তা। এটা হতে পারে না। আজকে যারা বিভিন্ন জায়গায় সেই স্বৈরাচার গুম-খুন, আয়না ঘরের সংস্কৃতি চালু করেছিল, তারা গণতন্ত্রকামী মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে সেখানে (আয়না ঘর) বছরের পর বছর আটকিয়ে রেখেছিলো, তাদেরকে হাত-পা পঙ্গু করে দিয়েছে, যাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে সেই সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে কাউকে গুলশানে, কাউকে গুলিস্তানে, কাউকে মিরপুরে, কাউকে আজিমপুরে… সেই সমস্ত ঘাপটি ধরা পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে সেখানে রাখা হয়েছে। এটাই যদি উদ্দেশ্য হয় এই অন্তর্বর্তী সরকারের তাহলে ছাত্র-জনতার এই আত্মত্যাগের কী হবে?।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা শুনতে পারছি, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেখছি, নানা কায়দায় সরকার ঘাপটি মারা স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী দোসরদের পুনর্বাসন করছে। কালকেও বলেছি, আজকেও বলি, একজন রাষ্ট্রদূত কাতারে ছিলেন.. কাতারে কারও (প্রবাসী) যদি ভিসার মেয়াদ শেষ হতো সেগুলোকে তিনি নবায়ন করতেন না।
তিনি খবর নিতেন ওই সমস্ত লোক কোনো দল করে, কাদের সমর্থক? কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অধিকাংশ প্রবাসী বিএনপির সমর্থক… তাদেরকে ওই রাষ্ট্রদূত নানাভাবে হয়রানি করেছেন, ভিসা নবায়ন করেননি। সেই লোককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে বলে শুনতে পারছি। তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার কাদের পুনর্বাসন করছে? যারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, যারা শহীদের লাশকে অপবিত্র করছে, শহীদের আত্মদান ও রক্তকে যারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে তাদেরকে?
রিজভী আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। তাকেই তো এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। তার প্রতি জনগণের যে আস্থা সেটি যাতে ফলপ্রসু হয়, সেটাও তো তাকে দেখতে হবে। কারা কাতারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র সচিব বানাচ্ছেন? এভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মারা ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। একটা সরকারে বিভিন্ন ধরনের লোক থাকতে পারে, নিরপেক্ষ লোকও থাকতে পারে যারা কাজ করবেন। কিন্তু যারা শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টকে সমর্থন করে বিরোধী দল দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে তাদের যদি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ পায় তাহলে এই সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এখনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে সমস্ত আইন-কানুন দরকার সেগুলো এখনো করা হয়নি… নির্বাচন কমিশন গঠন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ আরও যেসব সংস্কার কাজ আছে সেগুলো এখনো করা হয়নি। তার আগে যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে একজন বিতর্কিত এবং শেখ হাসিনার একজন সহযোগীকে বসানো হয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ওইরকম বিতর্কিত ব্যক্তিদের বসানো হয় তাহলে এই দেশ, এই দেশের জনগণ এবং বিপ্লবে দেড় হাজারেরও বেশি শহীদদেরকে অবমাননা করা হবে।
এর আগে সকালে এলিফেন্ট রোডে বিএনপি কর্তৃক প্রকাশিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন রিজভী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পারভেজ রেজা কাকন, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করীম শাহিন, মেহেবুব মাসুম শান্ত, আরিফুর রহমান তুষার, ডা. আউয়ালসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।