সাবেক স্ত্রীকে হয়রানি এবং ফ্ল্যাট দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ঠাকুরগাঁও এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে। তথ্য গোপন করে বিয়ে করার পর ওই স্ত্রীর ঘরের সন্তানের ভরণপোষণও দিচ্ছেন না বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ।
জানা গেছে, আগের দুই বিয়ের তথ্য গোপন করে ২০২১ সালে ২৫ জানুয়ারি ডা. সুমনা ইসলামকে বিয়ে করেন আহসান হাবীব। ডা. সুমনা ইসলামকে বিয়ে করলেও এ সংসার বেশি দিন টেকেনি। ২০২২ সালের ১৪ মার্চ তাদের তালাক হয়ে যায়। তালাক হলেও সাবেক স্ত্রী ডা. সুমনা ইসলামকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি ও হয়রানি করে আসছেন আহসান হাবীব। এমনকি তার কন্যা সন্তানকেও ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। এ নিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন সাবেক স্ত্রী ডা. সুমনা ইসলাম।
অভিযোগে বলা হয়, বিয়ের দুই মাস পরেই স্বামী আহসান হাবীব ও স্ত্রী ডা. সুমনা ইসলাম যৌথভাবে ব্রিজ হোল্ডিংস লিমিটেড এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ঋণ নিয়ে একটি ফ্ল্যাট বুকিং দেন। ফ্ল্যাটের বুকিং মানিসহ ব্যাংক ঋণের কিস্তি স্ত্রী সুমনা ইসলাম পরিশোধ করে আসছেন। আহসান হাবীবের আগের দুই বিয়ের খবর প্রকাশ পেলে মনোমলিন্য হতে থাকে তাদের মধ্যে। এক পর্যায়ে তাদের তালাক হয়। তালাকের পর থেকে ফ্ল্যাটটি দখলে নিতে পাঁয়তারা করতে থাকেন আহসান হাবীব। ফ্ল্যাট থেকে উচ্ছেদসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছেন। এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হন সুমনা। পরে দুইপক্ষের অভিভাবক এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ৩০০ (তিনশত) টাকার তিনটি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর প্রদান করে একটি সমঝোতা চুক্তিপত্র করা হয়। যেখানে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ত্রয়কৃত ফ্লাটটি আহসান হাবীব তার স্বত্ব বা মালিকানা সম্পূর্ণরূপে সাবেক স্ত্রী ডা. সুমনা ইসলামকে হস্তান্তর করেন। ভবিষ্যতে কখনও তিনি নিজে ও তার কোনো অংশীদার ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা দাবি করতে পারবেন না বলে হলফনামায় স্বাক্ষর করেন আহসান হাবীব। কিন্তু চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আহসান হাবীব হলফনামাকে অস্বীকার করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি পিটিশন মামলা করেন। তবে সত্যতা প্রমাণ না হওয়ায় আদালত মামাটি খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে আহসান হাবীব ব্রিজ হোল্ডিং লি. এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স লি. বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে ফ্ল্যাটটি তার নামে রেজিস্ট্রেশন করার হুমকি দেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১১ নভেম্বর আহসান হাবীব তার সাবেক স্ত্রী ডা. সুমনা ইসলামের বাসায় গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসেন। বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা নেওয়ার অনুরোধ করেন সুমনা ইসলাম। আহসান হাবীব আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একজন সুবিধাভোগী বলেও অভিযোগে বলা হয়।
এ বিষয়ে ডা. সুমনা ইসলাম বলেন, আহসান হাবীব তথ্য গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে আমায় বিয়ে করেন। এর আগেও তিনি দুইটা বিয়ে করেছেন। গর্ভাবস্থায় সে আমায় তালাক দেয়। আমাদের ২ বছরের একটা বাচ্চা আছে। সে বাচ্চার ভরণপোষণ দিচ্ছে না। আমার ফ্ল্যাট থেকেও উচ্ছেদের জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমি প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার নিকট অভিযোগ দিয়েছি।
জানা গেছে, তিন বউয়ের মধ্যে প্রথমজন ও তৃতীয়জনের সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছে আহসান হাবীবের। বর্তমানে দ্বিতীয় বউয়ের সঙ্গে সংসার করছেন তিনি।
এদিকে নিজের বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো. আহসান হাবীব। তিনি বলেন, আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না। আমার একাধিক স্ত্রী আছে জেনেশুনেই তিনি আমাকে বিয়ে করেছেন। আমি তার বাসায় কাউকে পাঠাইনি বা হুমাকি-ধমকি দিইনি। ফ্ল্যাট দখল করার চেষ্টার অভিযোগ সত্য নয়।