অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বরকত, সালাম, রফিক, জাব্বারের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল, তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহাবিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহাবিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশকে পাল্টে দিল। এই বিস্ফোরণ আমাদের ১৭ কোটি মানুষের সত্ত্বায় নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় গ্রথিত করে দিয়ে গেছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বইমেলা উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অমর একুশে বইমেলার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি—একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়, একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ী-দীর্ঘস্থায়ী সকল দূরত্বের ঊর্ধ্বে।
এই জন্য সকল প্রকার জাতীয় উৎসবে, সংকটে, দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনার ছুটে যাই। যেখানে আমরা স্বস্তি পাই, শান্তি পাই; আমরা সমাধান পাই।
সাময়িকভাবে অদৃশ্য ঐক্যকে খুঁজে পাই। একুশ আমাদের মানুষকে এভাবে তৈরি করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, একুশ আমাদের পথ দেখায়। মাত্র ৬ মাস আগে জুলাই অভ্যুত্থান জাতিকে ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে, যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত এই দেশকে দ্রুততম গতিতে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করার প্রস্তুতি নিতে সাহস পেয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে, প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশ প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে। শুধুই তাই নয়, এটা গভীরতর হয়েছে। আমাদেরকে দুঃসাহসী করেছে। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান তার জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তর করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণ-তরুণী কিশোর-কিশোরীরা রাস্তার দেয়ালে তাদের স্বপ্নগুলো, তাদের আশঙ্কাগুলো, তাদের দাবিগুলো অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় এঁকে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের রাস্তার দেয়াল এখন ঐতিহাসিক দলিলে রূপান্তরে হয়ছে। এগুলোর স্থান এখন আমাদের বুকের মধ্যে এবং জাদুঘরে হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি বইমেলার উদ্যোগকে। তারা এই দেয়ালচিত্রগুলো আসা এবং যাওয়ার পথে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত এই বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। ক্রমে ক্রমে এর গুণগত এবং আয়োজনগত পরিবর্তন হয়েই থাকবে।